পরিবেশ বিপর্যয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর
পর্যটকের চাপে ঝুঁকির মুখে দেশের দ্বিতীয় রামসার অঞ্চল টাঙ্গুয়ার হাওর ও তার জীববৈচিত্র। এখানে দর্শনার্থী নিয়ে দিনে চলাচল করছে প্রায় আড়াইশ ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। মাছ-পাখির এই অভায়াশ্রমে উচ্চ শব্দে বাজছে মাইক। পানিতে পড়ে থাকে পলিথিন-প্লাস্টিক।
টাঙ্গুয়ার বড় গোলা ওয়াচটাওয়ার লাগোয়া হিজল-করচের বাগানেই বেশি আগ্রহ দর্শনার্থীদের। তাই এখানে প্রতিদিন পর্যটক বোঝাই করে আসছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, লঞ্চ। যেখানে উচ্চশব্দে বাজানো হচ্ছে মাইক।
প্রতিনিয়ত জলাধারে পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল, পলিথিনের ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আর এত এসবের পরও এ মৌসুমে হাওর ভ্রমণে আড়াইশ ট্রলারকে অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, রামসার নীতিমালা অনুসারে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে হাওরকে পূর্বের প্রাণ ও প্রকৃতির কাছে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই দীর্ঘ সময়ে বিনষ্ট হয়েছে হাওরের সম্পদ।
এর মধ্যে গত দেড় দশক ধরে সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকদের উৎপাত বেড়েছে। স্পিডবোট, ইঞ্জিন নৌকা, লঞ্চসহ ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের শব্দে ও পর্যটকদের ব্যবহৃত বর্জ্য হাওরের জলজ ও স্থলজ বিনষ্ট হচ্ছে বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ।
হিজল-করচের বাগান ছাড়াও তাহিরপুরের পাটলি চিরিং ঝর্ণাটিও রয়েছে জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। মেঘালয়ের কালাপাহাড় থেকে নেমে আসা এই জলধারা রুদ্র রূপ নেয় জুন-জুলাইয়ে। এখানকার গারোদের প্রধান পানির উৎস এই পাটলি চিরিং। অথচ দর্শনার্থীর চাপে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
গবেষকরা বলছেন, হাওরে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন বিকাশের কথা বললেও, এর কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সবার নজর ব্যবসার প্রসারে থাকায় নষ্ট হচ্ছে বাস্তুসংস্থান।
জলবায়ু গবেষক আইনুন নিশাত বলেন, “প্রতিটি জিনিসের একটি সঠিক সময়সূচি রয়েছে। হাওরে পাখি দেখতে পর্যটকদের যাওয়া উচিত হয় খুব সকালে না হলে সন্ধ্যায়। কিন্তু আমাদের পর্যটকরা সেখানে সারাদিনই থেকে হৈ-হুল্লোর করছেন এতে করে পাখিদের থাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে”।
তাই শীতে লাখও পরিযায়ী পাখির আবাস আর দেড়শ প্রজাতির মিঠা পানির মাছের অভায়াশ্রম টাঙ্গুয়াকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যাকুরিয়াম। তাই এটি পরিবেশগত সংরক্ষিত এলাকা। এখানে হৈ-হুল্লোড়-শব্দ দূষণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন গবেষকরা।
হাওর বেড়াতে এসে ঘটছে প্রাণহানীও। বাড়ছে বখাটের উৎপাত। অথচ এসবের নজরদারিতে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতাও তেমন নেই।