পরিবেশ বাঁচাতে যথাযথ আইনের প্রয়োগ করতে হবে
পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে ঢাকার তাপমাত্রাও। সত্তরের দশক এবং গত দশকের তুলনা করলে আমরা দেখতে পাই, ঢাকার তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট বৃদ্ধি পেয়েছে।
দিন দিন আমাদের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আইন, নীতি এবং কৌশলপত্র আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইন ও নীতি বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের নদী, জলাধারগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ ও নদীকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এ সব কথা বলেন। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল (সিপিআই) এবং যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) যৌথভাবে এ আয়োজন করে।
সংলাপে প্রধান অতিথির আলোচনায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে আমরা ১০০ বছরের পরিকল্পনা করেছি। এটা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ পৃথিবীর সপ্তম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। আমরা ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বলেছি, নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাপমাত্রা কমাতে হলে জলাধার সৃষ্টি করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এমএস সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোকরও আছে। আমাদের পরিবেশ-নদীকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘আমাদের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। নদী দূষণ, বায়ু ও শব্দ দূষণের কারণে জাতীয় অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর যে প্রভাব পড়ছে তা অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।’
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনসম্পৃক্ততা নেই। জনসম্পৃক্ততার যে কথাগুলো বলা হয় তা কাগজে কলমে। ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে যে শিল্পায়ন হয়েছে তার অধিকাংশই হয় জলাধারের পাশে অথবা জলাধার ভরাট করে।
এ সময় নীতি তৈরির মাধ্যমে পরিবেশ বিনষ্টের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়। শহরের রূপান্তর এবং উন্নয়নের সময় অবশ্যই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
স্ট্যামেফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয় জিরো পয়েন্ট এলাকায়, যা সচিবালয়ের একশ’ মিটারের মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের পরে বায়ুদূষণের মাত্রা যতটা কমে এসেছিল, কোভিডকালীন লকডাউনের সময়ও আমরা সেই মাত্রায় দূষণ কমাতে পারিনি। মেট্রোরেলের কাজের কারণেও ঢাকায় বায়ু দূষণ বেড়েছে।’
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’র সহযোগী প্রভাষক গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আমরা দূষণের যে ভয়াবহতা দেখতে পাচ্ছি, এটাকে আসলে বলা হয় ইকোসাইড। সারা পৃথিবীতে যত ঘৃণিত অপরাধ রয়েছে, তার মধ্যে ইকোসাইড অন্যতম। আইন তৈরি হয়েছে দূষণ বন্ধ করতে কিন্তু পরিবেশ ধ্বংসের কাজেই সেই আইন ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমাদের সৃষ্টি করা এই দূষণ এবং পরিবেশ ধ্বংসের কাজগুলো গ্লোবাল ক্লাইমেট ক্রাইসিসকে ত্বরান্বিত করছে। উন্নয়ন হতে হবে তবে উন্নয়ন এবং পরিবেশের যে দ্বন্দ্ব তাতে অবশ্যই পরিবেশকে প্রাধান্য দিতে হবে।’
রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতাদের অঙ্গীকার জরুরি। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নদী ও পরিবেশকে যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসে আমরা আর দেখতে পাই না।’
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন,
‘অনেক আইন হয়েছে, অনেক পলিসি হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বেড়েই চলেছে। কার্বণ নিঃসরণে যারা বেশি দায়ী দেশ তাদের পলিসিকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।’ এছাড়া সংলাপে আরও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।