পরিবেশ বাঁচাতে এসির ব্যবহার কমাতে হবে
রাজধানীতে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠনের এক আয়োজনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ব্যবহারসীমিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা করতে না পারলে সবুজায়নের পরিমাণ বাড়ালেও কাজ হবে না।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ঢাকায় সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমার পাশাপাশি ভবন নির্মাণ কৌশলের কারণেও তাপমাত্রা বাড়ছে। এসির ব্যবহারও এতে ভূমিকা রেখেছে।
শনিবার নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)রাজধানীর বাংলা মোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘ঢাকায় দাবদাহ: নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে।
সেই আলোচনায় স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে আবদ্ধ ও কাচ নির্মিত ঘর আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে।
ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরে সবুজ যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কংক্রিটের পরিমাণ, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে। বাড়ছে আরবান হিট আইল্যান্ড এর প্রভাব।
২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে।’
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।’
বিআইপির ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিয়াঁজো পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘কাগজে কলমে ঢাকা শহরে যে পরিমাণ খাল অথবা জলাভূমির পরিমাণ উল্লেখ করা রয়েছে বাস্তবে তার পরিমাণ আরও কম।
প্রতিনিয়ত নগরায়ণে পার্ক, উদ্যান এবং জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে যা আমাদের ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ। তাছাড়া ঢাকা শহরে এসি ব্যবহারে যে বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা গড়ে উঠেছে তা থেকে আমাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব সরে আসতে হবে।’
বিআইপির বোর্ড সদস্য (রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন) পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা বলেন, ‘ঢাকার দাবদাহ নিয়ন্ত্রণ এবং তাপ সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরবান হিট মিটিগেশন ও ম্যানেজমেন্ট কৌশল নগর পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ বিবেচনায় আনতে হবে।’
পরিকল্পনাবিদ মো. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে ৫ থেকে ১০ শতাংশ জনগণ এসি ব্যবহার করে থাকে যা আমাদের ঢাকা শহরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি আমাদের জলবায়ুরও ক্ষতি করছে।’
এই ধরনের পণ্য ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়ন এবং জনগণকে তা মানতে বাধ্য করতে সরকারকে আহ্বানও জানান তিনি।
এর মধ্যে বৃক্ষ রোপণ, সবুজায়ন মহাপরিকল্পনা যেমন আছে, তেমনি জলাশয়-জলাভূমি ও সবুজ এলাকা বাস্তবতার নিরিখে সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে পুনরুদ্ধার করার কথা বলা আছে।
এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নির্দেশনা প্রণয়ন, ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল ও জ্বালানি সাশ্রয়কে প্রাধান্য দিয়ে যথাযথ নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের তাগিদও দেন তিনি।