ঢাকার দুই সিটিতে বছরে ২২ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্যরে পাহাড় হচ্ছে। সংস্থা দুটির বর্জ্য ফেলার নিজস্ব জায়গা আমিনবাজার ও মাতুয়াইল প্রায় ভরে গেছে। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অপরদিকে দুই সিটির ল্যান্ডফিলই পরিবেশ দূষণ বাড়াচ্ছে বলে জানান পরিবেশ অধিদফতর।
ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার টনেরও বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্যরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ২৫০০ থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হলেও কোরবানির সময় গত বছরের হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে।তবে গত ঈদের পর ৩৬ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছে এ দুই সংস্থা।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) রুবিনা ফেরদৌসি জানান, ছাড়পত্র ছাড়াই ডিএনসিসি নির্মিত করেছে আমিনবাজারের ল্যান্ডফিল স্টেশন আর দুই দফায় লিখিত নোটিশ দেয়া হলেও কর্ণপাত করছে না ডিএসসিসি। যার ফলে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
আমিনবাজারে জনবসতির কাছেই ল্যান্ডফিল করা হয়েছে। আর বর্জ্য থেকে নির্গত পানি মাটির নিচে চলে যাচ্ছে যা বুড়িগঙ্গা নদীতে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। ল্যান্ডফিল করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দেখা যায় না।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের বর্জ্য পানিতে মিশে নদী দূষণ করবে। এ ব্যাপারে ডিএনসিসিকে বলার পরও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতরের একক প্রচেষ্টায় পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়। রাজধানীসহ সারাদেশের পরিবেশের উন্নয়নে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে গণসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণে বছরে প্রায় এক লক্ষ মানুষের প্রাণহাণী ঘটে। যার মধ্যে ঢাকায় ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।
সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ল্যান্ডফিল ভরাটের পথে এ নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করার চিন্তা রয়েছে। ইতোমধ্যে মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ল্যান্ডফিল নতুন করে বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য আরো ১৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা চলছে। ডিএসসিসির ৮১ একর জমির মধ্যে ৫০ একর ল্যান্ডফিল ও ৩১ একর জায়গা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহার করা হবে। অপরদিকে উত্তর সিটির জন্য আমিনবাজারে আরো ৫১.৪৮ একর জমিতে ল্যান্ডফিলের জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা থাকবে না। এ জন্য নতুন করে ৮১ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ময়লা-আবর্জনা থেকে মারাত্মক সব রোগ হয়। তারা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, টিটেনাস এবং এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। হতে পারে তাদের পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগ। এ ছাড়া নাক-মুখ সুরক্ষিত না থাকায় নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভেতরে ঢুকছে মারাত্মক সব জীবাণু।