পরিবেশ দূষণের ফলে বাড়ছে নিউমোনিয়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পরিবেশ দূষণ বা অব্যবস্থাপনায় ফুফফুস সংক্রমণজনিত রোগ নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। যার মধ্যে রয়েছে বায়ু দূষণ, অপর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ পানির সংকট ও অপুষ্টি।
দেশে নিউমোনিয়া চিকিৎসায় সম্প্রসারিত টিকাসহ নানা কর্মসূচি থাকলেও এসব অব্যবস্থাপনার ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ বছরের কম বয়সি ৮০ হাজারের মতো শিশু ভাইরাল নিউমোনিয়ায় ও বিভিন্ন ধরনের রেসপিরেটরি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। যাদের মধ্যে ৫০ হাজার মারা যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সিদের শতকরা ২৮ ভাগ মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ। এটি নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণগুলোর একটি। বায়ু দূষণে মানুষের শরীরে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস প্রভৃতি ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়ে থাকে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকায় ঘরগুলোতে ভেন্টিলেশন সুবিধা কম থাকায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর ১০ লাখ শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার ১৮ শতাংশ। বর্তমানে এ রোগে এক হাজারে ৩৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ মৃত্যুর হার হাজারে ৩ জনে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। তবে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ শাহিনুর হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে বিশ্বে প্রায় ৭ লাখ ৯ হাজার ২০০ মানুষ নিউমোনিয়া মারা গেছে।
এর মধ্যে ৪ লাখ ২৩ হাজার মৃত্যু হয় গৃহস্থালি বায়ু দূষণে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে দ্রুত নগরায়ন ও শিল্প অঞ্চল গড়ে ওঠায় নির্মল বায়ু কমে যাচ্ছে। এতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, টিকা, স্বাস্থ্যকর জীবন ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা-এ তিনটি বিষয় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারে।
দেশে রোগটির চিকিৎসায় উপজেলা পর্যায়েও শিশু চিকিৎসক রয়েছেন। তবে রোগী ও অভিভাবকের অসচেতনতা ও অজ্ঞতায় যথাসময়ে হাসপাতালে যান না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি (বিপিএ) অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, করোনার কারণে নিউমোনিয়া টিকা কার্যক্রম কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। এ কার্যক্রমে গতি আনতে হবে।
শিশুর পুষ্টির উন্নতিকরণে কাজ করতে হবে। শিশুদের দুধমাপ বৃদ্ধিসহ এ পদক্ষেপগুলো নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ২০৩০ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার কথা রয়েছে। কিন্তু নিউমোনিয়ার মতো ভাইরাল রোগ কমাতে না পারলে এসডিজি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হবে।