বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের অন্যতম উৎস ইটভাটা।পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৫৮% বায়ুদূষণের উৎস ঢাকার আশেপাশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইটের ভাটা। পরিবেশ ও বন রক্ষায় ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯তম।
জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ানোর ফলে, শিল্পকারখানা, দহন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঘনঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তায় পাশে উঠিয়ে রাখা, যানবাহনের অসম্পূর্ণ থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের প্যার্টিকুলেট ম্যাটার (চগ২.৫ ও চগ১০), অ্যাশ, ধূলিকণা, সীসা, কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়তই দূষিত করছে বায়ু। বায়ুদূষণের ক্ষণস্থায়ী সমস্যাগুলোর মধ্যে নাক মুখ জ্বালাপোড়া করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি অন্যতম। ফুসফুসের ক্যান্সার, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, যক্ষা, কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, জন্মগত ত্রুটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব, হার্ট অ্যাটাক, যকৃত সমস্যা, গর্ভবতী মায়েদের ওপর প্রভাব, চর্মরোগ ও নিউমোনিয়া ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য হিসাব অনুযায়ী, ৯৮ শতাংশ ইটভাটা নতুন আইন অনুযায়ী অবৈধ ভাবে চলছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে যে, কৃষি জমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যবে না। এমনকি জনবসতি-খামার-বাজার এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। কৃষি জমি থেকে মাটি নিয়ে ইট বানানো যাবে না।অন্যদিকে ইটভাটার দূষণ বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া এবং আবাসিক এলাকা ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করতে সরকার ২০১৮ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করে। নতুন আইনে ইটভাটাকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তর করার কথা।
বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) জানায়, দেশের ৭ হাজার ৭৭২টি ইটভাটার মধ্যে ২ হাজার ২২৩টি উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করেনি। অথচ গেল বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন। এ আইনে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা, কৃষি জমি, বন, জলাভূমি, জনবসতি, সড়কের পাশে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষাকরণে নদী দখল উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী তীরের ইটভাটার বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। এমনও দেখা গেছে এক দিনে একাধিক ইটাভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে।গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর পশ্চিম ডগরী এলাকায় ছয়টি অবৈধ ইটভাটার মালিককে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
কৃষি প্রধান এই দেশে ইটভাটার সবচেয়ে বড় প্রভাব হল মাটির উর্বর উপরি অংশ পুড়িয়ে ইট তৈরী যা দেশের কৃষির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।এমতাবস্থায় জনসচেতনতা তৈরী করে উন্নত প্রযুক্তিতে ইট কারখানা তৈরীতে সরকারী ও বেসরকারী অর্থায়ন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগই পারে একটি পরিবেশ বান্ধব, কম দূষক নিঃসরক ইট তৈরীর পরিবেশ সৃষ্টি করতে যা গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের বিপক্ষে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থানকে নিশ্চিত করবে।