পরিবেশ খাতে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বাজেট
দেশে গাছপালা, নদনদী ও খালবিল দখল-দূষণের শিকার। রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ছে বায়ু ও শব্দদূষণ। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে কৃষিসহ নানা খাতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রকৃতির বিরূপ আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি। উদ্বাস্তু হচ্ছে উপকূলের মানুষ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যখন সারাবিশ্ব উদ্বিগ্ন, তখন বাংলাদেশে জাতীয় বাজেটে পরিবেশ খাত উপেক্ষিত। জাতীয় সংসদে পেশ করা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি রোধ নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। অন্যান্য বছরের মতো পরিবেশ খাতে বাজেট বরাদ্দ সামান্য বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় এবার ১৩৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন ও পরিচালনে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে ৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা হয়েছে।
তবে এবারই প্রথমবারের মতো পরিবেশদূষণ কমাতে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে আরোপ করা হচ্ছে বিভিন্ন সিসি বা কিলোওয়াটভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের বিষয়টি নীতি-কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ২২১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ কোটি টাকা কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ পেয়েছিল ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে তা ৭৩১ কোটি টাকা কমিয়ে করা হয় ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা করা হয়।
পরিবেশ সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমায় হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সরকার পরিবেশ সংরক্ষণে উদাসীন, এটা বাজেট বরাদ্দেই প্রতিফলিত।
পরিবেশ সংরক্ষণে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা, লোকবল বাড়াতে বড়সড় বরাদ্দ প্রয়োজন। কেননা এখনও ব্যাপক হারে শিল্পায়ন হচ্ছে। কিন্তু বাজেটে যদি সঠিক বরাদ্দ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটা টেকসই বাজেট না।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, পরিবেশের ভেতরে অন্যান্য জিনিস এমনভাবে দেওয়া হচ্ছে, যেগুলো আসলে পরিবেশের না।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা অবকাঠামো বরাদ্দকে পরিবেশে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি যথাযথভাবে যেন পরিবেশের জন্য টেকসই বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়লেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেট কিছুটা কমানো হয়েছে। এবার বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৬৪৬ কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয়টিতে বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয় ১০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পায় ১০ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিবেশ রক্ষার ওপর সরকারকে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও নিতে হবে।
এসব বিষয় এখন বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। অন্য দেশগুলো এখন জানতে চাইবে এখানকার পণ্যগুলো টেকসই পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে কিনা।