পরিবেশের অন্যতম মহা শত্রু প্লাস্টিক
দিন যত যাচ্ছে, প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। বাসাবাড়ি, অফিস সব জায়গায় এখন প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার দেখা যায়। দৈনন্দিন ব্যবহারে পলিথিন যেন মানুষের অনুষঙ্গ।
যে কোনো পণ্য সামগ্রী বহনে ব্যবহার করা হয় সহজলভ্য পলিথিন ব্যাগ। প্লাস্টিক সামগ্রী ও পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান। প্লাস্টিক এমন বস্তু, যা কোনো সিন্থেটিক বা আধা সিন্থেটিক জৈব যৌগ দ্বারা তৈরি। নমনীয়তার জন্য এটিকে গলিয়ে শক্ত জিনিসের মধ্যে ঢালা যায়।
প্লাস্টিক ব্যবহারে কিছু দীর্ঘমেয়াদি অসুবিধা হচ্ছে, প্লাস্টিক দূষণে ইকো সিস্টেম ধ্বংস হয়। প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণিকুল। প্লাস্টিক ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি পরিবেশের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে। প্লাস্টিক দূষণ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক হিসেবে পরিবেশে টিকে থাকে।
প্লাস্টিকের অন্যতম উপাদান পলিথিন, যেটা আমাদের দেশে অহরহ ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পলিথিন ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ সরকার পলিথিন ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করলেও ঘটে চলেছে ভিন্ন ঘটনা।
সারাদেশের বাজারে পণ্য সরবরাহ করা হয় পলিথিনের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ এবং ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য বহনের ক্ষেত্রেও পলিথিন দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেন কারও কোনো দায়িত্ব নেই, কারও কোনো সচেতনতা নেই, নেই কোনো দেশপ্রেম। দেশের মাটি-পানি মারাত্মকভাবে দূষণের কবলে পড়ছে প্লাস্টিক ও পলিথিনের অযাচিত ব্যবহারের কারণে।
পরিবেশ দূষণের একাধিক কারণ আমাদের সামনে থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যতটা না প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট, তার চেয়েও বেশি মানবসৃষ্ট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ।
আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যের মোড়কে প্রতিদিন পলিথিন ও প্লাস্টিক মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ওই দ্রব্যগুলো ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসেবে পলিথিন ও প্লাস্টিকের মোড়কগুলো ড্রেন, রাস্তাঘাট, মাঠ-ময়দান, নদী-নালা, খাল-বিল ও ফসলের ক্ষেতে ফেলা হচ্ছে।
পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য মাটিতে ফেলার দরুন মাটির উর্বরতা হারাচ্ছে। ড্রেন, নদী-নালা ও খাল-বিলে ফেলার দরুন ড্রেনগুলো ময়লা পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং নদী-নালা ও খাল-বিল মাছ চাষে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সমুদ্রের ঢেউ ও সূর্যের আলোর প্রভাবে প্লাস্টিকের পণ্য ধীরে ধীরে টুকরো হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। পানি ও অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে এ মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন জীবদেহে প্রবেশ করে।
এক সময় ফুড চেইন বিশেষ করে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে, যা মানবদেহে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটায়। এ ছাড়া ক্লোরিনযুক্ত প্লাস্টিক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে, যা ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের পানির সঙ্গে মিশে যায়।
এভাবেই পানি গ্রহণে তা খাদ্যচক্রে ঢোকার মাধ্যমেও প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অন্যদিকে প্লাস্টিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।
আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে– পরিবেশ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় অন্ততপক্ষে ‘একবার ব্যবহারযোগ্য’ প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করে পরিবেশবান্ধব পাট, কাপড়, কাগজে প্রস্তুতকৃত ব্যাগ ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করব। আশা করি, সবাই সচেতন হবেন।