22 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
ভোর ৫:১৬ | ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জাহাজ ভাঙা শিল্প
পরিবেশ দূষণ

পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জাহাজ ভাঙা শিল্প

পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জাহাজ ভাঙা শিল্প

জাহাজ ভাঙা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিশেষ করে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে কেন্দ্রিত। এই শিল্প থেকে পাওয়া ধাতব পদার্থ ও অন্যান্য উপাদান পুনর্ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উক্ত শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে তা কারোর অস্বীকার করার সাধ্য নেই।

তবে এর পরিবেশগত প্রভাবও অত্যন্ত গুরুতর। জাহাজ ভাঙা শিল্পের মাধ্যমে তৈরি হওয়া বিপুল পরিমাণ বর্জ্য এবং দূষণ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

জাহাজ ভাঙা শিল্প হলো পুরোনো, অচল বা অব্যবহৃত জাহাজগুলোকে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া, যেখানে জাহাজের ধাতব পদার্থ এবং অন্যান্য উপকরণ পুনঃব্যবহারযোগ্য হিসেবে সংগ্রহ করা হয়।

এই প্রক্রিয়ায় জাহাজের লোহা, ইস্পাত, তেল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য উপকরণকে আলাদা করে বিভিন্ন শিল্পে পুনঃব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয়।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুসন্ধান করে জানা যায়, ১৯৬০-এর দশকে জাহাজ ভাঙা শিল্পের কার্যক্রম শুরু হয় চট্টগ্রামে এবং বর্তমানে এটি দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প খাতে পরিণত হয়েছে।

১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম উপকূলে সংঘটিত এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে গ্রিক জাহাজ ‘এমডি আলপাইন’ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বঙ্গোপসাগরের তীরে আটকে যায়। জাহাজটি আর সাগরে ভাসানো সম্ভব না হওয়ায় সেখানেই বেশ কয়েক বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।



পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম স্টিল হাউস কর্তৃপক্ষ জাহাজটি কিনে নেয় এবং সম্পূর্ণ জাহাজ কয়েক বছর ধরে ভেঙে স্ক্র্যাপে পরিণত করে। দেশে এখান থেকেই মূলত জাহাজ ভাঙা শিল্পের যাত্রা শুরু।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি জাহাজ ‘আল আব্বাস’ মিত্র বাহিনীর গোলাবর্ষণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এটি উদ্ধার করে ফৌজদারহাট সমুদ্রতীরে আনা হয়।

১৯৭৪ সালে কর্ণফুলী মেটাল ওয়ার্কস লিঃ নামের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান জাহাজটি কিনে নেয় এবং স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে। ঠিক এভাবেই শুরু হয় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের কার্যক্রম।

বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ইতিহাস বেশ পুরনো, তবে ১৯৮০-৯০-এর দশকে এটি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ ভাঙার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিত, প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০-২৫ মিলিয়ন টন জাহাজ ভাঙা হয়, যার অধিকাংশ আসে পুরোনো পণ্য পরিবহনকারী জাহাজ থেকে। বিশ্বব্যাপী ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ মাসে বিশ্বে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ৫২.৪% (৮.০২ মিলিয়ন টন) জাহাজ বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছে।

দেশে প্রায় ১২০টি শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের মধ্যে ৫০টি সম্পূর্ণরূপে চলমান রয়েছে। বর্তমানে দেশের জন্য এটি আজ একটি বড় ও লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়েছে।

এমনকি উক্ত শিল্প প্রতি বছর কর প্রদানের মাধ্যমে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করে। জাহাজ ভাঙার শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জাহাজ ভাঙা শিল্পের পরিবেশগত সমস্যা অত্যন্ত ভয়াবহ। নিম্নমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতির কারণে এই শিল্প মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।

পুরোনো জাহাজগুলোতে থাকা অ্যাসবেস্টস, পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, এবং তেল সমুদ্র ও মাটিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে। এছাড়া, জাহাজ ভাঙার সময় নির্গত ধাতব ধুলো এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান বাতাসেও ব্যাপক দূষণ ঘটায়।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত