বন্যার পানি নেমে গেছে। শুকিয়েছে চলাচলের পথ ঘাট। কিন্তু বন্যার পানিতে পচে গেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদী নিকটবর্তী পাঁচটি ইউনিয়নের আটটি ওয়ার্ডের শত শত কৃষকের স্বপ্ন ১ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমির আমন ধান। প্রথম দু-দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও তৃতীয় দফা বন্যার পানি জমে থাকায় পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির উঠতি রোপা আমনের ক্ষেত। এ অবস্থায় পেটের ভাত এবং গবাদিপশুর খাবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে ওইসব এলাকার কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় দফা বন্যায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার সরজমিনে, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের গতামারির দোলা এলাকার কৃষক আজিজার রহমান (৫৫), নুরল হক (৪৫) ও আবেদ আলী (৪০) বলেন, মাতার (মাথার) ঘাম পাওয়োত (পায়ে) ফ্যালে ধানগুলা গাইরলোং (রোপণ করলাম), সউগ (সব) বানে খায়া গেইলো বাহে। এলা হামরা খামো কি আর গরু গুলাক বা খোয়ামো কি, সেই চিন্তাতে (চিন্তায়) বাঁচি না।
ফুলবাড়ী ইউনিয়নের প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান (৪৮) জোতকৃষ্টহরি গ্রামের আউয়াল হক (৪৫) পূর্ব ধনিরাম গ্রামের বাদল সরকার (৩৮) জানান, বিআর-২৮ ইরি ধান সারা বছরই ফলে। পচে যাওয়া ধান গাছ সরিয়ে নরম জমিতে বিআর-২৮ ধানের চারা লাগালে এখনো আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সরকারিভাবে চারা সরবরাহ করা ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তারা। উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি ও খোঁচাবাড়ী ওয়ার্ড, বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম, পশ্চিম ধনিরাম ও ঘোগারকুটি ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা, ফুলবাড়ী ইউনিয়নের প্রাণকৃষ্ণ ওয়ার্ড, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের যোতইন্দ্র নারায়ণ ও রোশন শিমুলবাড়ী এবং নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী ও চর গোরক মন্ডল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের শত শত হেক্টর জমির আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার ৭শ’ ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে উপজেলার ১ হাজার ৬শ’ হেক্টর উঠতি আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে জেলায় পাঠানো হবে। কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। সূত্র: মানবজমিন