নদী রক্ষার সঙ্গে যে মন্ত্রণালয়গুলো জড়িত রয়েছে, তাদের সদিচ্ছার অভাব।——জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান
জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি নদী দখল-দূষণও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীসংক্রান্ত আদালতের রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। নদী রক্ষার সঙ্গে যে মন্ত্রণালয়গুলো জড়িত রয়েছে, তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। আমরা তাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
বিশ্ব নদী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মুজিবুর রহমান হাওলাদার। তিনি নদীর সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে সদিচ্ছা ও সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। জাতীয় দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ এতে সহযোগিতা করে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদী শুধু খনন করলেই চলবে না, নদীর দুই পাড়ও প্রসারিত করতে হবে। তিনি আরও জানান, নদী কমিশন বিভাগওয়ারি প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করেছে, যা এখন মুদ্রণের অপেক্ষায় আছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে বিভাগওয়ারি তথ্যসংবলিত ২০১৯ সালের প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘নদীর সংখ্যা নির্ধারণের আগে নদীর সংজ্ঞা আমাদের জানতে হবে। দখল-দূষণের বাইরেও নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া, সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং পানির গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বেলার প্রধান নির্বাহী আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান তাঁর উপস্থাপনায় দেশের নদীর একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের বেশ কিছু নদী রক্ষার পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও এই নদীগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। ট্যানারি শিল্পকারখানার মালিকেরা ইটিপি ব্যবহার করছে না। সরকার নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছে ঠিকই কিন্তু নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্য কমিশনকে কোনো ক্ষমতা দেয়নি। এই কমিশন এ পর্যন্ত নদী রক্ষায় ১২২ দফার সুপারিশ তৈরি করেছে। কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ কাজ করতে পারছে না।
নদী কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশিদ বলেন, নদী কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন নিয়েও সরকারের আমলাদের সঙ্গে নদী কমিশনের টানাপোড়েন চলছে। এ টানাপোড়েন দূর করতে সরকারের ভেতরে যারা নদী রক্ষায় অনিয়ম করছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, তুহিন ওয়াদুদ, হাসিবুর রহমান প্রমুখ। সূত্র- প্রথম আলো