নদী-জলাধার ধ্বংসকারীদের শাস্তি দাবি
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেছেন, আইন অমান্য করে একটি চক্র দেশের নদনদী-জলাধার ধ্বংস করছে। পরিবেশবিরোধী এই কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানান আবু নাসের খান। বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে পবার ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির শিরোনাম ‘আমাদের কৃষি ও পরিবেশ জলাভূমিনির্ভর, সংকটাপন্ন জলাভূমি সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করতে হবে’।
মানববন্ধনে পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তুসংস্থান নদী ও জলাশয়কেন্দ্রিক। কৃষি ও সব জীববৈচিত্র্য জলাধারনির্ভর। আর শিল্পগুলো কৃষিনির্ভর। ফলে নদী ও জলাধার সংরক্ষণ করা না গেলে আমরা বাঁচব না। আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরব।’
পবা চেয়ারম্যান বলেন, কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীর অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। নদী ও জলাধার ধ্বংস করে কোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনগত বাধা আছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও একটি চক্র এই কাজগুলো করছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
আবু নাসের খান বলেন, ‘আমাদের শিল্পকারখানার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এগুলো থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ আমাদের নদী ও জলাধার বিষাক্ত করে ফেলছে। এ কারণে আমাদের সব খাদ্যচক্র দূষিত হচ্ছে। তাই পরিবেশ দূষণ করে কোনো শিল্প যাতে না হতে পারে, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।’
পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ জলাভূমি মিঠা পানির। এ দেশের হাওর অত্যন্ত সমৃদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে হাওরসহ জলাভূমিগুলো আমাদের রক্ষা করে।
আমরা আমাদের জলাভূমিগুলো, বিশেষ করে হাওরগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছি। পরিকল্পিতভাবেই এটি করা হচ্ছে। শুধু হাওর এলাকার বাসিন্দারা নন, সরকারিভাবেও এটি করা হচ্ছে।’
আবদুস সোবহান আরও বলেন, ঢাকা শহর পাঁচটি নদী দ্বারা বেষ্টিত। তা সত্ত্বেও এখানে পানির অভাব আছে। আবার একটু বৃষ্টি হলেই সারা শহর পানির নিচে তলিয়ে যায়। এর প্রধান কারণ ঢাকা শহরে যে পরিমাণ নদী-জলাভূমি ছিল, তার বেশির ভাগই দখল-ভরাট হয়ে গেছে। জলাভূমি ধ্বংস করে উন্নয়নের নামে এখানে হাউজিং কমপ্লেক্স করা হয়েছে।
মানববন্ধনে পবার সহসম্পাদক আইনজীবী নিশাত মাহমুদ বলেন, দেশের স্থানীয় সরকারগুলোকে জলাভূমি রক্ষায় পর্যাপ্ত গাইডলাইন দিতে হবে, যাতে তারা পারিপার্শ্বিক জলাধারগুলো রক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং নীতি ও আইনের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে জলাধার-জলাভূমি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল বাতেন সরকার, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের নেতা মো. সেলিম, নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, গ্রিন ফোর্সের কর্মী ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে, বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পবা কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাভূমি সংরক্ষণে জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮-এর বাস্তবায়ন, জলাভূমি সুরক্ষায় গণসচেতনতা বৃদ্ধি, নদী-জলাভূমি দখল ও দূষণ প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন, সব সড়ক ও রেলপথের পরিকল্পনায় অবাধ পানি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, জলজীবন সংরক্ষণ-উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।