নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় কুড়িগ্রামে চলতি বছরের পঞ্চম দফা বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও চরের মানুষজন। আর পানির কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। গত এক সপ্তাহে সদরের ভোগডাঙা, যাত্রাপুর ও মোগলবাসায় ৩৪৩টি বসতভিটা ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্য নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে রয়েছে।
জেলায় অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ৪৩১ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে ১৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির ফসল। টানা বন্যার কারণে কর্মহীন লোকের সংখ্যা বেড়ে তাদের ঘরে চলছে চরম খাদ্যসংকট। নদী ভাঙনে গৃহহীন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা খাদ্য সহায়তার আশায় ভিড় করছে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে। তাদের নিয়ে জনপ্রতিনিধিরাও ভীষণ চিন্তিত।
পঞ্চম দফা বন্যায় জেলার ৬০ হাজার মানুষ পানির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। নিম্নাঞ্চলে ডুবে থাকা বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। কিন্তু ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর ও দ্বীপচরের বানভাসি মানুষগুলোর দুর্ভোগ এখনও রয়ে গেছে।
সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহে তার ইউনিয়নে ধরলা নদীর করাল গ্রাসে জগমহনের চর এলাকার ১০৫ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে নন্দদুলালের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গিলে নিয়েছে।
তিনি বলেন, তার এখানে বন্যায় দুই হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ দপ্তর থেকে যে এক মেট্রিক টন চাল পেয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নদী ভাঙনে গৃহহীন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা পাওয়ার আশায় তার বাড়িতে ভিড় করছেন।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী জানান, গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে তার ইউনিয়নের পোরারচর, ভগবতীপুর, শিবেরপাচি, খাসেরচর, বলদিপাড়া ও পার্বতীপুর এলাকার ৯০ বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে চাহিদাপত্র দিয়েছেন। বরাদ্দ পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
মোগলবাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরজামাল বাবলু জানান, ধরলার ভাঙনে তার ইউনিয়নের মালভাঙা, পল্লীগ্রাম ও চরকৃষ্ণপুর এলাকার ১৪৪ বসতভিটা গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে চলে গেছে। গৃহহীন পরিবারগুলোকে কোথায় আশ্রয় দেবেন এ নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এবারে বন্যায় কুড়িগ্রামের ৪৩১ পুকুরের প্রায় ১০০ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা। আর অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ টাকা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এখন বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। নদী ভাঙন রোধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এবারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৮৫ মেট্রিক টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গোখাদ্য বাবদ ৪ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্য বাবদ ১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।