ধরণী দিবস ২০২৩
২২ শে এপ্রিল, ২০২৩-যখন এই উপমহাদেশসহ পূর্ব এশিয়ার মুসলমানগণ প্রবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছিল, তখন এই দিনটিতে সারা বিশ্বে ধরণী দিবস-২০২৩ পালিত হচ্ছিল।
ঈদ উদযাপনের আড়ালে মুসলিম দেশসমূহে এই দিবসটি পালনে কিছুটা ম্লাণ হলেও দিবসটি এমন একসময়ে পালিত হচ্ছে যেসময়ে এই উপমহাদেশের মানুষ গরমে অস্তির হয়ে উঠছে।
এ ধরণীটিা দিন দিন কেন এমন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে? কেনই বা এর পরিবেশ দিন দিন মানবজাতির বসবাসের জন্য কষ্টদায়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে? আমরা কি এর মাত্রারিক্ত কোন ক্ষতি করে চলেছি বা এর ভারসাম্যতা নষ্ট করে চলেছি এবং যদি করেই থাকি তবে এ ক্ষতি বন্ধ বা হ্রাস করা বা এর ভারসাম্য পূনারোদ্ধার কিভাবে করা যায় – তা বিশ্ববাসীকে জ্ঞাত করা, স্মরণ করিয়ে দেওয়া ও তদানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সময় যে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে তা মনে করিয়ে দেওয়া সে জন্য ১৯৭০ সাল হতে প্রতি বছর জাতিসংঘের উদ্যোগে ২২ এপ্রিল এ দিবস টি পালিত হচ্ছে।
এ বছর ধরিত্রী দিবসের ৫১তম দিবস উদযাপিত হয়েছে। ধরণিী দিবস আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে আমরা পৃথিবীর সাথে কতটা নিবিড়ভাবে সংযুক্ত, সেইসাথে এটি রক্ষা করার জন্য আমাদেরকত বড় দায়িত্ব।
তাই, পৃথিবী নামক গ্রহটির প্রতি মানবজাতির দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য এবং এটিকে রক্ষা করার জন্য যথাপোযুক্ত ভূমিকা পালন করার অঙ্গীকার করার জন্য এ দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে।
আমরা সবাই গাছ লাগিয়ে, বর্জ্য পরিষ্কার করে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মতো অ-নবায়নযোগ্য সম্পদের উপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশে অবদান রাখতে পারি।
ওয়ার্ল্ড আর্থডে নেট ওর্য়াক অর্গাইজেশন বর্তমানে আর্থডে.অর্গানাইজেশণ(EARTHDAY.ORG) কর্তৃত এ বছরের ধরিত্রী দিবসের প্রতিপ্রাদ্যটি নির্বাচন করা হয়েছে: আমাদের পৃথিবীর জন্য বিনিয়োগ করুন(Invest in Our Planet), যা আগামী একবছর পর্যন্ত বলবত থাকবে।
এ বছর এ দিবসটি সারা বিশ্বে বিভিন্ন কর্মর্সূচী যেমন র্যালি, কনসার্ট, এবং বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে। আমাদের গ্রহ এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এ সকল কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
অনেক হয়েছে, আর নয়। ব্যক্তিগত লাভ ও সূখ-সমিদ্ধির জন্য, উন্নয়নের নামে মানবজাতির আরামও আয়াশী জীবন যাপনের জন্যে ইতোমধ্যে আমরা এ পৃথিবীর অনেক ক্ষতি করেছি এবং করে চলেছি, পৃথিবীটাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছি এবং করে চলেছি, ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে অন্য জাতীর মৌলিক আধিকার লুন্ঠিত করার জন্য, স্বাধিনতা লংগিত করার জন্য রাশায়নিক দূষণ ছড়িয়ে চলেছি, আর নয়।
এখন সময় হয়েছে মূলত সময় পার হয়ে যাচ্ছে এ পৃথিবীর ক্ষত মেরামতের জন্য বিনিয়োগ করার অর্থাৎ যৌথভাবে মানবজাতির উন্নয়ন ও পৃথিবীর পরিবেশ পূনরাদ্ধারের জন্য বিনিয়োগ করার।
আরো স্পষ্টভাবে বল্লে বলতে হয়, উন্নয়নের জন্য এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা এ ধরার পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না বরং কল্যাণকর হবে, পরিবেশ দূষণ ছড়াবে না বরং পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাবে। আমাদের উন্নয়নের অংশিদারিত্বে থাকবে আমাদের মা পৃথিবী(Mother Earth) এবং তা হলো সবুজ অর্থনীতি।
একটি সবুজ, সমৃদ্ধ এবং ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য বাস্তবে পরিণত হওয়ার জন্য, ব্যবসায়ী, সরকার এবং নাগরিক সমাজকে জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর সুফলের সদ্ব্যবহার করতে আসুন আমরা সবুজ অর্থনীতি গ্রহণ করি। একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য এর জন্য সরকার, সমাজ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যবসায়ীদের ব্যাপক সমর্থন প্রয়োজন।
ধরিত্রী দিবস-২০২৩ এ আমরা কিভাবে ব্যক্তিগতভাবে অবদান রাখতে পারি?
পৃথিবী দিবস-২০২৩ তে অবদান রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল-আমরা যে পরিবেশগত সমস্যাগুলির মুখোমুখি হচ্ছি সে সম্পর্কে আরও ভাল করে অবগত হওয়া ও তদবিষয়ে সচেতন হওয়া এবং তা লাগবে কি করা যায়-তা করার চেষ্ঠা করা, তাতে অবদান রাখা। এ সংক্রান্ত কিছু ধারণা নিন্মে দেওয়া হলো:
- অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, বাড়ির কক্ষ হতে বের হওয়ার সময় বৈদ্যুতিক স্লুইচ বন্ধ করা, বৈদ্যুতিক সরামঞ্জাদি বিদ্যুৎ বিছিন্ন করা, বাগানে, সড়কে স্থাপিত বৈদ্যুতিক বাতি প্রভাত হওয়ার সাথে সাথে বৈদ্যুতিক আলো নিবিয়ে ফেলা, ছাদে পানি তোলার মোটর যথাসময়ে বন্ধ করা, বিয়ে-শাদী বা অনুষ্ঠানাদিতে আলোকসজ্জা না করা, বাগানে, সড়কে বা বিল্ডিং অবকাঠামোর সৌন্দর্য বর্ধণে কৃত্রিম ঝরণার ব্যবহার হ্রাস করা বা বন্ধ রাখা, পানির অপচয় বন্ধ করা ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার হ্রাস করে পরিবেশের উন্নয়ন করা যায়। মনে রাখতে হবে যে, সারা বিশ্বের গ্রীণ হাউজ গ্যাস তথা কার্বণডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস উৎপাদনকারী জীবাস্ম জ্বালাণী তথা ডিজেল, পেট্টোল, অকটেন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
- স্বল্প পরিসরে যাতায়ত বা চলাপেরার জন্য সাইকেল ব্যবহার করা এবং হাটার অভ্যাস গড়ে তোলা। দূরবর্তী স্থানে চলাফেরায় বাস বা প্লেন এর পরিবর্তে লেগাড়ীতে চলাচল করা।
- কেমিক্যাল পণ্য বর্ণ করে পরিবেশ বান্ধব পণ্য কেনার কথা বিবেচনা করা।
- কম খাওয়ার এবং অপচয় হ্রাস করা।খাদ্য উৎপাদনে প্রচুর শক্তি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে। শক্তি উৎপাদনে জীবাস্ম জ্বালাণীর ব্যবহার হচ্ছে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এ পৃথিবীকে মারাত্বকভাবে দূষিত করে চলছে।অন্যদিকে পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য সংকটে ভূগছে। তাই খাদ্যে অপচয় হ্রাস করা উচিত।
- কাপড়ের ব্যবহার সীমিত করা এবং একই কাপড় বার বার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা। মানুষের বস্র তৈরীতে বহু বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, প্রচুর শক্তি ব্যয় হচ্ছে, রংয়ের ব্যবহারে পানি ক্রমাগতভাবে দূষিত হচ্ছে।
- কাগজের ব্যবহার হ্রাস করে উন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করা। মনে রাখতে হবে, কাগজের কাঁচামালের উৎসই হলো গাছ।
- কোন দ্রব্য একবার ব্যবহার না করে পূণ:পূণিকভাবে ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা।
- একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার না করা।
- অপচনশীল দ্রব্যাদির ব্যবহারের পরিবর্তে পচনশীল দ্রব্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা।
- বেশী বেশী গাছ রোপন করা এবং গাছ বা বাগান, বন কর্তণ বন্ধ করা বা এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা, অবদান রাখা।
- যত্রতত্র ময়লা-আর্বজণা না ফেলা।
- পোঁকামাকড়, পশু-পাখি অযথা মেরে না ফেলে তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা। মনে রাখতে হবে প্রতিটি পোঁকা-মাকড়, পশু-পাখি আমাদের জন্য, এ পৃথিবীর কল্যাণের জন্য ও এর ভারসাম্য রক্ষার জন্য অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। প্রবিত্র কোরাণ শরীফেও মহান আল্লাহতালা এ কথা বলেছেন। দরূন আমাদের অতিঘৃণিত এবং তুচ্ছ তেলাপোকার কথাই বলিনা কেন- উহা আপনার আমার ঘরের অপচণশীল দ্রব্রাদি যেমন নখ, ছোট ছোট প্লাষ্টিকের টুকরা, ঝড়ে পড়া চুল ইত্যাদি অনবরত খেয়ে আমাদের ঘর পরিস্কার রাখছে। এই যে বনাঞ্চল যা আমাকে আপনাকে অক্সজেন দিচ্ছে, এ পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছে, সে বনাঞ্চলের গাছপালার পাতা খেয়ে, শুকনো ডাল-পালা খেয়ে এবং উপরের মাটি নীচে ও নীচের মাটি উপরে এনে গাছের খাদ্য নাইট্রেট বানাচ্ছে ও নাইট্টেট সরবরাহ করছে এই তুচ্ছ ও আমাদের ঘৃণীত তেলাপোকা, ইত্যাদি।
- শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পিচার, লেখালেখি, কার্টুণ ইত্যাদির মাধ্যমেও ঘরে বসেও স্যোসাল মিডিয়ায় পৃথিবী দিবস-২০২৩ এর গুরুত্ব তুলে ধরে প্রচার করা যায়।