দেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ
এক মাস ধরে চলা দাবদাহের মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, সেটি গাছ। অনেকেই বলছেন, কাজে-অকাজে যখন-তখন কাছ কাটার ফলে পরিবেশ দিন দিন তপ্ত হয়ে উঠছে। লম্বা সময় ধরে গাছ কাটা, বন উজাড়ের ফল এখন ভোগ করতে শুরু করেছে দেশের মানুষ।
একটি দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি ঠিক রাখতে অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার হলেও বাংলাদেশে মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে বলে জানিয়েছেন খোদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
আর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৬ লাখ ৭ হাজার ৬২০ একর।
এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ আগের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০১৭ সালে, প্রায় ৭০ হাজার একর।
গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ লাখ সাড়ে ৯৬ হাজার একর (২০ লাখ ২২ হাজার হেক্টর) প্রাকৃতিক বনভূমি ছিল, যা মোট ভূমির ১৬ শতাংশ।
প্রতিবছরই সেই বনভূমি কমছে। শুধু ২০২৩ সালেই বনভূমি কমেছে প্রায় ৪৪ হাজার একর। এই বিশাল এলাকার গাছগাছালি ধ্বংস না হলে অন্তত ৭৫ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঠেকানো যেত।
ফরেস্ট ওয়াচের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি কমেছে চট্টগ্রামে; ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৭০ একর, যা মোট কমে যাওয়া বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার ৯৪ শতাংশ; এরপর যথাক্রমে আছে সিলেট, সেখানে কমেছে ২০ হাজার ৬৭৪ একর, ১৩ হাজার ৯৮০ একর, রংপুরে কমেছে ১ হাজার ১৯০ একর, রাজশাহীতে ৭৯৮ একর, খুলনায় ৫০১ একর, বরিশালে কমেছে প্রায় ২৪৫ একর।
গত ২০ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চল যে পরিমাণ বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা হারিয়েছে, তার ৭৬ শতাংশই বান্দরবান ও রাঙামাটিতে। এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি উজাড় হয়েছে বান্দরবানে- ২ লাখ ৯ হাজার ৭৯২ একর।
এছাড়া রাঙামাটিতে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১০ একর, খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার ৫৪১ একর, চট্টগ্রামে ২৩ হাজার ১০৪ একর ও কক্সবাজারে ২২ হাজার ৭৮৩ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা ধ্বংস হয়েছে।
এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তালিকায় প্রথম নামটি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম, যেখানে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৬ লাখ ২২ হাজার ৪৪০ একর, দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেশটি হচ্ছে আফ্রিকার দেশ মালাউই, সেখানে কমেছে ৬ লাখ ১০ হাজার ৯০ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমি।
গবেষণায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ২২ হাজার ৪৪৫টি স্থানে বৃক্ষ নিধন হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ফরেস্ট ওয়াচ। এসব এলাকায় প্রায় ৬২৯ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা উজাড় হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা সংস্থাটির।
শুধু এপ্রিলের ১০ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ৭ দিনে ৪ হাজার ৫৯৫টি স্থান নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যার ফলে ১৩০ একর বন উজাড় হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সহায়তায় কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা ও সতর্কতা জারি করেছে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ।
বাংলাদেশের যেসব স্থানে বৃক্ষ নিধনের বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে চট্টগ্রামে। উজাড় হওয়ার শঙ্কায় থাকা ভূমির ৭২ শতাংশই (৪৫৬ একর) চট্টগ্রামের।
বাদবাকি এলাকাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে ঢাকা। ঢাকায় ১২১ একর, সিলেটে ৩৭ একর, রংপুর ও খুলনায় প্রায় ৫ একর করে, রাজশাহীতে ২.৫০ একর এবং বরিশালে প্রায় ২ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা উজাড় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।