দেশে প্লাস্টিক দূষণে প্রথম হলো কোকা-কোলা
দেশে প্লাস্টিক দূষণে ৫ম বারের মতো প্রথম স্থান অধিকার করেছে কোকা-কোলা। নিজেদের সংগ্রহ করা ৩০ হাজার ৮৬২টি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে জরিপ করে এই তথ্য দিয়েছে পরিবেশবাদী গবেষণা সংস্থা এসডো।
শনিবার (২২ অক্টোবর) লালমাটিয়ায় সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় এসডো।
সংস্থাটি জানায়, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর তিনটি মহানগরীতে থেকে তাদের সংগ্রহ করা ১১৬ কেজি বর্জ্যে ৩০ হাজার ৮৬২ পিস প্লাস্টিক পাওয়া যায়।
এসব বর্জ্যের মধ্যে স্থানীয় ৩৮ টি এবং আন্তর্জাতিক ১৪টি কোম্পানির ২২০টির মধ্যে সর্বোচ্চ ২০.৭৮ শতাংশ কোকা-কোলা, পেপসিকো ১৫.৬০ শতাংশ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের ৯.৬৩ শতাংশ, ইউনিলিভার ৬.৫ শতাংশ, পারটেক্স গ্রুপ ৫.০৮ শতাংশ, আকিজ গ্রুপ ৩.৬৩ শতাংশ, নেসলে ৫.১ শতাংশ এবং বম্বে সুইটস লিমিটেড ৩.৭ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারস সৈয়দ মারঘুব মোর্শেদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার হৃদিতা ফেরদৌস।
এ সময় বক্তব্য রাখেন সংস্থার মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন, নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল হাসেম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মারঘুব মোর্শেদ বলেন, ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।
কর্পোরেশনগুলিকে তাদের দ্বারা সৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণের দায় নিতেই হবে। এই কোম্পানিগুলোর অপুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যে ও স্যাশেতে আমাদের বাজার সয়লাব যা আমাদের আরো হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাসেমের মতে, ‘বাংলাদেশে টানা ৫ বার প্লাস্টিক দূষণের জন্য একই কর্পোরেট দূষণকারীরা দায়ী দেখে খুবই অবাক লাগছে।
বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই প্লাস্টিক সংকটের বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে এবং আসন্ন প্লাস্টিক চুক্তির মাধ্যমে আমরা এই ধরনের বিপজ্জনক দূষণের সমাধান খুঁজে পাব বলে আশা করছি।’
এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, ৪ হাজারটিরও বেশি রাসায়নিক শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলি সম্ভাব্যভাবে প্লাস্টিকের প্যাকেজিংয়ে উপস্থিত বা এটি তৈরির সময় ব্যবহৃত হয়।
এই রাসায়নিকগুলির মধ্যে কমপক্ষে ১৪৮টি মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো এন্ডোক্রাইন সমস্যা, ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি, ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা এবং শিশুদের বিকাশের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারকে অবিলম্বে এই বিষয়ে জোর দেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন।
এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব একটি বৈশ্বিক চুক্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা প্রথম দেশ বাংলাদেশ। সুতরাং, অবশ্যই, চুক্তি সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।
আমাদের এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে কীভাবে আমাদের দেশ এবং আমাদের জীবন থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা যায়।’