দেশে জ্বালানী চাহিদার শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা মিটানোর দাবিতে রাজধানীতে পারিবারিক বাইসাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত
গত ১৮ মে, ২০২৪ শনিবার সকাল ৯:৩০ মিনিটে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে তারস্থলে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা মিটানোর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আগামী পৃথিবী গড়ার আহবানে রাজধানীতে পারিবারিক বাইসাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
“মানুষ এবং ধরিত্রীর জন্য প্যাডেল ২০২৪” এই শিরোনামে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও একই দিনে একই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি তথা প্রেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ করে তার পরিবর্তে প্রয়োজনীয় জ্বালানীর শতভাগ ক্রমশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা মিঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে পরিবার, সম্প্রদায় তথা এই পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য এপিএমডিডি (APMDD), ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (DHARA), বিডি ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ (Waterkeepers Bangladesh) যৌথভাবে এই পারিবারিক বাইসাইকেল র্যালির আয়োজন করে।
১৮ মে, ২০২৪ সকালে রাজধানীর শাহবাগে এই ফ্যামিলি প্যাডেল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর কম্যুনিকেশনস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মামুন কবীরের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এর বেসরকারি উপদেষ্টা এবং ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সহ-আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইআরডিএ (ERDA) এর সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন চৌধুরী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, বিডি ট্যুরিস্ট সাইকিস্ট এর প্রধান সমন্বয়কারী মো: আমিনুল ইসলাম টুববুস প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফটো অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাবের পরিচালক মোঃ শহীদুজ্জামান বাদল, মিরপুর বয়েজ স্টান্ড গ্রুপের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী রিমন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সহ-সভাপতি, মোহাম্মদ রিয়াজ এবং স্বপন দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবেদা সুলতানা মিলি, কোস্টারিকা রানী বিশ্বাস, আনজুমান আরা সাম্য, মোঃ কাজিমুল ইসলাম প্রমূখ।
র্যালীর উদ্বোধক এমএস সিদ্দিকী বলেন, “আমাদের পৃথিবী রক্ষায় আমাদের মানুষ রক্ষায় আমাদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। পরিবেশ দূষণ হ্রাসে জীবস্ম জ্বালানী দ্বারা চালিত গাড়ী বন্ধ করে ক্রমেই জ্বালানীবিহীন যান তথা বাসাইকেল ব্যবহারের দিকে ঝুকতে হবে।
এখনো বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলোতে বাসাইকেল মানুষের প্রধান বাহন। শিশুরা স্কুলে যায় সাইকেল চালিয়ে। শহুরে মানুষ মোটরসাইকেল আর মোটরগাড়ি ব্যবহার করার মাধ্যমে পরিবেশকে দূষিত করে। কিন্তু আমাদের পরিবেশ ও ধরিত্রী রক্ষায় আমাদেরকে বাইসাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।”
ইআরডিএ এর সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, ”এই র্যালীতে পরিবারগুলো আজকে বাইসাইকেল চালিয়ে এই কর্মসূচিতে এসেছেন। এই কর্মসূচী দেখে দেশের অন্যান্য পরিবারগুলোও উৎসাহিত হবে বাসাইকেল ব্যবহারে। সুন্দর একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য আমাদেরকে সাইকেল চালাতে হবে। রক্ষা করতে হবে এই ধরিত্রীকে।”
অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ”সরকারের জীবাশ্ব জ্বালানি ব্যবহারের যে কমিটমেন্ট রয়েছে, কিন্তু কাজের মধ্যে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পরেও আমরা দেখি আমার দেশের পরিবেশের ও প্রতিবেশের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও নাজুক জায়গাগুলোতে কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট হচ্ছে, যেটা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে।
তাই সরকারকে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হয় এমন কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়নের জন্য উন্নত দেশের মত বাইসাইকেলের জন্য আমাদের দেশে আলাদা লেনের ব্যবস্থা করার দিকে মনযোগ দিতে হবে, এতে করে অনেকে বাইসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হবে ও দুর্ঘটনা কমবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে অবশ্যই দুষণ কমাতে হবে। এজন্য আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর আবশ্যক। আজকে এই ফ্যামিলি সাইকেল র্যালি থেকে দেশবাসী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে আনুৎসাহিত হবেন এটাই প্রত্যাশা করি।”
বিডি ট্যুরিস্ট সাইকিস্ট এর প্রধান সমন্বয়কারী মো: আমিনুল ইসলাম টুববুস বলেন, ”পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাইকেলের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য আলাদা সাইকেল লেন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সাইকেল লেন নেই।
আমরা পৃথিবীকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার মুক্ত করতে সাইকেলের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে চাই। এর জন্য সড়কে নিরাপদ সাইকেল লেন দরকার। তাই সরকারের কাছে সাইকেল লেন বাস্তবায়ন করার দাবি জানাই।”
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর কম্যুনিকেশনস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মামুন কবীর বলেন, ”জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ এবং শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমরা শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানাই। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটি দূষণমুক্ত পৃথিবী রেখে যেতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে পরিবার, সম্প্রদায় তথা এই পৃথিবীর মঙ্গলের কাজকে ত্বরান্বিত করতে হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ফ্যামিলি সাইকেল র্যালিটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিটিতে কয়েকশত সাইক্লিস্ট তাদের পরিবারের সদস্য যেমন পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্বামী-স্ত্রীসহ অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সেরা সাইক্লিস্ট আনোয়ার হোসেন রুম‘র পরিবারকে পুরষ্কৃত করা হয়। তারা পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে এই র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও একই দিনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বরগুনার পাথরঘাটা, বাগেরহাটের মোংলা, এবং কক্সবাজারের পেকুয়াতে এপিএমডিডি, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা(ধরা),এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে একই দাবিতে এই পারিবারিক বাইসাইকেল র্যালির আয়োজন করে।