21 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১০:৪৯ | ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বাগেরহাটের কাঠের ঘর এখন ইউরোপের বেলজিয়ামে
পরিবেশ বিশ্লেষন পরিবেশগত অর্থনীতি

দেশের বৃক্ষ নিধন করে ইউরোপকে পরিবেশবান্ধব করা কতখানি যৌক্তিক?

বাগেরহাটের কাঠের ঘর এখন ইউরোপের বেলজিয়ামে

অতি সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটা ‘সুখবর’ অত্যন্ত গুরুত্ব ও গর্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে যে বাগেরহাটে তৈরি কাঠের ঘর যাচ্ছে ইউরোপের বেলজিয়ামে। ‘পরিবেশবান্ধব’ ও দৃষ্টিনন্দন এসব কাঠের ঘরের চাহিদা বাড়ছে ইউরোপে। সেই চাহিদা মেটানোর সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, ব্রিটেন, ভিয়েতনামসহ আরও কিছু দেশের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নিয়ে এই কাজ পেয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের নিজস্ব সামগ্রী ব্যবহার করে দেশীয় কারিগরদের হাতে তৈরি কাঠের ঘর রপ্তানি হবে ইউরোপে, সেই ঘর ইউরোপের একটি দেশের নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে দিয়ে আসবেন আমাদের কারিগরেরাই—এটা আত্মতৃপ্তি লাভ করার মতো একটা অর্জন বটে।

খবরের এই পর্যন্ত পড়ে যেকোনো সরলমনা পাঠক দেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে ভেবে আত্মতৃপ্ত হবেন। এসব খবরে বলা হচ্ছে, ‘পরিবেশবান্ধব’ ঘরগুলো রপ্তানির মাধ্যমে নতুন বাজার সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং উন্মোচিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথ।

খবরের বয়ানে মনে হচ্ছে, এই উদ্যোগটা আমাদের দেশের জন্যই ‘পরিবেশবান্ধব’ হবে। তাই এ কাজে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার প্রত্যাশাও করছেন এই উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তারা যে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে ‘খুশি’ হচ্ছেন, সেটি হচ্ছে তাঁদের ভাষায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভিন্নভাবে কাজ করা,’ বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের কারিগরদের ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া, উপকরণগুলো বায়োডিগ্রেডেবল বলে ‘পরিবেশবান্ধব’, নারী-পুরুষ মিলিয়ে গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান এবং সর্বোপরি দেশের জন্য বিদেশি মুদ্রা আয়—ইত্যাদি।

ঠিক এখানে এসেই খুশি না হয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয় একজন পরিবেশসচেতন মানুষকে। ইউরোপে তাদের পরিবেশবান্ধব ঘর পাঠিয়ে সেসব দেশের পরিবেশ রক্ষায় আমাদের ক্রমহ্রাসমান বৃক্ষ সম্পদ কেন ব্যবহার করতে হবে?



বিশ্বের অষ্টম ঘন জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে বিরূপ পরিবেশের লক্ষণ যেখানে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, সেখানে দেশের বৃক্ষনিধন করে ইউরোপকে পরিবেশবান্ধব করার এই দায়িত্ব গ্রহণ করা কতখানি যৌক্তিক?

আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই আত্মবিধ্বংসী কাজটি আমরা পেয়েছি বলে কারোরই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। আমাদের সস্তা শ্রম এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবের কারণেই অন্য দেশের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে গেছি আমরা।

জানা যায়, একসময় ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়াসহ আরও কিছু দেশ কাঠের ঘর রপ্তানি করত। কিন্তু এখন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়ে গেছে বলে নিজেদের বনজ সম্পদ উজাড় করার কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

তাই ইউরোপকে পরিবেশবান্ধব করার দায়িত্ব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। অবশ্য লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়ার মতো দেশগুলো এখনো কাঠের ঘর রপ্তানি করে যাচ্ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশে।

আমরা যদি কাঠের ঘর রপ্তানিকারক দেশগুলোর বনজ সম্পদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করি, তাহলে দেখতে পাই ক্রোয়েশিয়ার বনভূমি দেশটির আয়তনের ৩৪ শতাংশ আর বুলগেরিয়ার ৩৬ শতাংশ। লিথুয়ানিয়ায় এই হার ৩৪ এবং এস্তোনিয়ায় ৫২ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশের আয়তনের মাত্র ১৬ শতাংশ বনভূমি (বাস্তবে আরও কম হতে পারে)।

বৃক্ষনিধন ও বন উজাড়ের এই মহোৎসবে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে বেড়ে চলা শিমুল আলু নামে পরিচিত কাসাভার চাষ। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে কাসাভা চাষের জন্য শত শত একর বনভূমি উজাড় করে বাড়ানো হচ্ছে চাষের জমি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বন কেটে কন্দজাতীয় এই ফসল চাষের ফলে মাটি ক্ষয় হতে থাকে, যার অনিবার্য পরিণাম ভূমিধস, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়ে চলেছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত