দেশীয় জাতের গাছ পরিবেশ ও জীবের প্রাণ বাঁচায়
বাংলাদেশ সরকার এবং পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণ বিভাগ কর্তৃক ১৯৯৯ সালে, হাকালুকি হাওরসহ কয়েকটি হাওর এলাকা, কক্সবাজার ও টেকনাফ সমুদ্রবন্দর এলাকাকে Ecologicaly Critical Area (ECA) ঘোষণা করেন।
তারপর এসব এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জলবায়ু সংরক্ষণ বিভাগ Costal Weatland Management Project (CWMP)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে সংঘবদ্ধ করে গ্রাম সংরক্ষণ দল বা Village Conservation Group (VCG)-এর মাধ্যমে হাওর তীরবর্তী জলাভূমি, রাস্তার পার্শ্বের খালি জায়গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে।
এই প্রজেক্টের ফলজ ও বনজ গাছ লাগানো হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় খালি জায়গা ও খাসজমিতে দেশীয় জাতের ফলজ ও বনজ গাছ লাগানো হলে, সেই সুফল আমরা ভোগ করতাম।
খাদ্যের জন্য বন্য প্রাণী আজ লোকালয়ে আসত না। এখন বসবাসের জন্য অধিকাংশ প্রাণী লোকালয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তা ছাড়া আরও কয়েকটি কুফলের বিষয় নিম্নে তুলে ধরছি:
বাংলাদেশের বনাঞ্চলকে ধ্বংস করে ইউক্যালিপ্টাস, মেহগনি, একাশিয়ামের মতো বিদেশি গাছের মনোকালচার করে মূলত বন বিভাগ ধ্বংস হয়েছে। বন বিভাগে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অনবিজ্ঞ চিন্তাধারাতে বন উজাড় হয়েছে, পাশাপাশি বন্য প্রাণী, পশু-পাখির অভয়ারণ্যে নষ্ট হয়েছে। এখন প্রাণীগুলো খাদ্যের জন্য এদিগ-সেদিগ ঘোরাফেরা করছে।
মোট কথা বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এ ধরনের ভুল পরিকল্পনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চল উজাড় হয়েছে। উল্লেখ্য, চীনের গোবি মরুভূমিতে চায়না বিশাল বাজেট করে কয়েক লাখের বেশি ম্যাপল/পাইনগাছ লাগিয়েছিল।
সে গাছগুলো মরুভূমিতে সাহায্যকারী কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি, বরং বৃক্ষরোপণে টেকসই কাজে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এ কাজে দুটি ভুল স্পষ্ট হয়েছে যেমন-
- ১. বর্ণিত এলাকায় দেশীয় জাতের গাছ না লাগানোর ফলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়েছে, বন্য প্রাণীর খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে এবং প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
- ২. ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। পশুপাখিগুলো চাহিদামতো খাদ্য না পেয়ে এদিগ-সেদিগ ঘোরাফেরা করে, খাদ্যের অভাবে পশু-পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ফলজ গাছ না থাকাতে পশু-পাখি বাহিরে চলে আসে এবং গাছে ফুল ও ফল না ধরলে বংশবৃদ্ধি পায় না। বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটাতে অঞ্চলভেদে মাটি পরীক্ষা সাপেক্ষে গাছ লাগাতে হবে। যেসব এলাকায় গাছ কম, ওই এলাকার ইকোসিস্টেম, বায়োটিক এবং এবায়োটিক এলিমেন্টের সঙ্গে পজিটিভলি ইন্টারেক্ট করবে।
আমাদের দেশের মাটির উর্বরাশক্তি এক সমান নহে। তাই সব জায়গাতে সব জাতের গাছপালা, ফলমূল ভালো হয় না। যেকোনো গাছ লাগানোর আগে মাটি পরীক্ষা করা উচিত। তখন এই মাটিতে কোন জাতীয় গাছ লাগালে টেকসই হবে, সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
নতুবা সব প্রচেষ্টা বিফলে যাবে। আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা না বুজে বিদেশি গাছ লাগাতে মানুষকে উৎসাহিত করেন। মানুষ আরেকজনের দেখে গাছ লাগাতে প্রতিযোগিতা করে। পরিশেষে ফলাফল শূন্য থাকে। Invasive আচরণে ইকোসিস্টেম স্থায়ীভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রূপান্তর হয়।
আমাদের দেশে Suckermouth fish যা করছে, রুই ও কাতলা (Carps) জাতীয় মাছে আমেরিকার নদ-নদীগুলোতে একইভাবে ধ্বংসযজ্ঞ করছে।
মেরু অঞ্চল ও সমতল তৃণভূমিতে যদি গাছ লাগানো হয়, তাতে সেখানে উষ্ণতা বাড়াবে। মেরু অঞ্চলের বরফ মূলত আয়নার মতো আলো প্রতিফলন করে।
সেখানে যদি গাছ লাগানো হয়, তবে গাছের গায়ে অপ্রতিফলি রং তাপ শোষণ করে। অন্যদিকে তৃণভূমিতে তৃণভোজীদের বিচরণে ও খাদ্য গ্রহণে ক্রমাগত তৃণকে মাটির সারে রূপান্তর করে উক্ত তৃণমালাকে পুনরায় গ্রোথ স্টেজ শুরু করে, গাছ লাগালে তা একসময় তুলনামূলকভাবে ধীর হয়ে যায়।
যে মাটিতে যে গাছ জন্মাবে, সেই মাটিতে সেই গাছ লাগানো উচিত। জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে মানুষ সতর্ক হবে, ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে মানুষ রক্ষা পাবে।