ঢাকার বায়ুমান দিন দিন খারাপ হচ্ছে।এর জন্য যেমন দেশের অভ্যন্তরের দূষণ দায়ী তেমনি দেশের বাহিরের দূষণও দায়ী।গত ২৮ ডিসেম্বর একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে এমনি তথ্য উঠে এসেছে।আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ম্যাগাজিন ফর এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজার’ এ ঢাকাসহ বিশ্বের চারটি শহরের শীতকালীন বায়ুদূষণ সম্পর্কে একটি গবেষণা নিবন্ধন প্রকাশিত হয়েছে।ভূ-উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি, মানচিত্র ও মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ইন্দো–গাঙ্গেয় অববাহিকা এলাকায় ফসল কাটার পর খড় পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া দিল্লি শহরকে দূষণ করার সাথে সাথে তা হাজার মাইল অতিক্রম করে বাংলাদেশেও প্রবেশ করছে। ভারত, নেপাল, মঙ্গোলিয়া ও পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে শীত থেকে রক্ষার জন্য মানুষ বাড়িতে কাঠ, তুষ ও খড় পোড়ায়। রান্নাসহ অন্যান্য কাজেও গ্রামের মানুষ জৈব জ্বালানি ব্যবহার করে। এতে সৃষ্ট দূষিত বায়ুর প্রবাহ নভেম্বরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, যা বাংলাদেশের বায়ুকে আরও দূষিত করে তোলে।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টের বাংলাদেশি গবেষক মনিরুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে।
সম্প্রতি গবেষকেরা প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুায়ারি) পরিবেশ অধিদপ্তরে এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।সভায় দেশের ভেতরে ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়া এবং নির্মাণকাজের ধুলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানা যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ জানান, ‘আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ নিয়ে প্রতিবেদনটি আমরা পেয়েছি। ওই গবেষণার ফলাফলকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করছি। কারণ, রাজধানীর বায়ু দূষণমুক্ত করতে অনেক অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন বায়ুর মান ভালো হচ্ছে না, তা বোঝার জন্য আমরা এই সভাটি করছি।’
আরেকটি গবেষণা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় ও রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দুই যুগে ঢাকার বাতাসের মানের ওপর বায়ুপ্রবাহের প্রভাব নিয়ে যৌথভাবে আরেকটি গবেষণা করেছেন।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে বায়ুদূষণ ঘটছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে আন্তসীমান্ত বায়ুপ্রবাহ। ইরান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তানের শুষ্ক মরু অঞ্চল থেকে ধূলিকণা বাতাসে মিশে গিয়ে পশ্চিমা লঘুচাপের মাধ্যমে ওই ধূলিকণাসহ বাতাস ভারতে প্রবেশ করে। আর নভেম্বর থেকে ওই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে।তাছাড়া ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচি ও বাংলাদেশের ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মারাত্মক যানজট ও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালিও বাতাসে মিশছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ওই শহরগুলো এই অঞ্চলের বায়ুকে দূষিত করে ফেলছে।
আবহাওয়া ও পরিবেশ গবেষক অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান এ সম্পর্কে জানান, ‘ভারত ও চীনের উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। সেখান থেকে আসা ধোঁয়া বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশও সেই পথে এগোচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বড় অবকাঠামো নির্মাণ বেড়ে গেছে, যা বায়ুকে আরও দূষিত করছে। ফলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কীভাবে উন্নয়ন করব ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করব।’