দিনে দিনে ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়
হাওর এবং পাহাড়ের সমন্বয়ে এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত জেলা নেত্রকোনা। যেখানে ধান, মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি খনিজ সম্পদে ভরপুর। কিন্তু দিনে দিনে ঘটছে বিপর্যয়।
ধংস হচ্ছে পরিবেশ। কমে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। ফলে প্রভাব পড়ছে কৃষির উপর। সর্বোপরি বিরুপ আবহাওয়ায় পরিবেশ-প্রতিবেশ হুমকিতে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জনজীবনে।
হাওর অঞ্চলে এখন আর অতিথি পাখির দেখা মিলে না। ফসলি জমিতে কার্যকরী সরীসৃপ প্রাণী না থাকায় পোকাগুলো ধান নষ্ট করছে। বর্ষায় পানি থাকছে না।
আবার পাহাড়ি ঢলে অসময়ে ডুবে যায় ফসলি জমিসহ সমতল। উজানের বালুতে নষ্ট হয় বিস্তর ভূমি। যে কারণে জমির উর্বরতা কমছে আশঙ্কাজন হারে।
বছর বছর ধানের নতুন জাত রোপন করতে হয় কৃষকদের। এদিকে পাহাড়ের গাছ কাটা একটি পুরনো ধ্বংসলীলা। যা থামছে না। যত্রযত্র কেটে বন সাবাড় হচ্ছে। অন্যদিকে বনজঙ্গল বিনষ্ট হওয়ায় পশু-পাখি বন ছেড়ে দিচ্ছে।
প্রায় সময় লোকালয়ে ধরা পড়ছে নানা ধরনের পরিচিত-অপরিচিত বিরল প্রজাতির প্রাণী। গেল কয়েক মাসে সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী ধরা পড়েছে।
তার মধ্যে সাপের সংখ্যা বেশি ছিলো। যেগুলোকে মানুষ হত্যা করে অনেক সময় ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। হাতির মত বড় প্রাণীও ধরা পড়ে মারা গিয়েছে সীমান্তে।
এসব নানা কারণে প্রকৃতি তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। অন্যদিকে হাওরগুলোতে অপরিকল্পিত ও অধিক হারে ফসল রক্ষা বাঁধে নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা। তেমনি কমে যাচ্ছে মাছের উৎপাদন। বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে মৎস্য প্রজনন। ফলে এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে জনজীবনে।
পাহাড়ি এই অঞ্চলে বনভূমি ধ্বংস করে আবাসস্থল তৈরি করায় বন্যপ্রাণী কমার পাশাপাশি কমছে বনভূমির পরিমাণ।
পরিবেশবাদীরা বলছেন গত ২০ বছরে এ অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক বন্যপ্রাণী। যার প্রভাব পড়ছে কৃষিসহ স্থানীয় পরিবেশের উপর। যে কারণে গেল কয়েক বছর ধরে দুর্যোগের জেলায় পরিণত হয়েছে নেত্রকোনা।
বন্যপ্রাণী রক্ষায় সেভ দ্য এনিমেল অব সুসংয়েরে সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল জানান, চলতি বছরে বর্ষায় উজানের পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মধ্যে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী অন্যতম।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাসেলস ভাইপার আতঙ্কের গুজবে সবচেয়ে প্রভাব পড়েছে এই প্রাণীগুলোর উপরে। পাহাড় থেকে সমতল সব স্থানেই হত্যার শিকার হয়েছে ছোট বড় নানা প্রজাতির সাপ।
অনুমানিক কয়েক শাতধিক নির্বিষ সাপকে মেরে ফেলেছে মানুষ। অন্তত ১০টি অজগর হত্যা করেছে। কলমাকান্দার পাঁচগাও সীমান্তে ধানক্ষেতে ২০ ফুট লম্বা একটি অজগর আশ্রয় নিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে।
গলায় দড়ি বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে ঘুরানো হয় পুরো গ্রাম। শেষ পর্যন্ত ধারালো দা দিয়ে টুকরো করে হত্যা করা হয় অজগরটিকে।
পরিবেশ রক্ষায় গবেষণাকারী সংস্থা বারসিকের সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান বলেন, সাপ কৃষি জমির ক্ষতিকর পোকামাকড়সহ ইঁদুর খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।
কিন্তু সাপসহ এসকল সরীসৃপ প্রাণী কমে যাওয়ায় কৃষি জমিতে পোকামাকড় বাড়ছে। প্রতিবছরই ধানের ফলনে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ধান। কৃত্রিম কীটনাশকসহ নানা কারণে ব্যয় বাড়ছে কৃষকের। এগুলোর জন্য সবার সচেতন হতে হবে। সরকারকে নিতে হবে জরুরি উদ্যোগ।
পাশাপাশি অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধের ফলে ভরাট হচ্ছে কৃষি জমি। ইটের ভাটায় নিচ্ছে উর্বর মাটি। এগুলো বন্ধ করতে হবে দ্রুত।