হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহপুর এলাকায় অবস্থিত একটি কারখানার দূষিত বর্জ্য গিয়ে খালে পড়ছে। এতে এলাকার পরিবেশদূষণ থেকে শুরু করে কৃষিজমি ও গবাদিপশুর ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) শিল্প এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ২ সচিবসহ ১১ জনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।
বেলা সিলেটের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় লোকজন এ বিষয়ে বেলার সহযোগিতা চেয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেলার প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। পরে বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর গতকাল বুধবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ১১ জনের কাছে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এলাকাবাসীর পরিবেশগত অধিকার ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে সবার বিরুদ্ধে বেলা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
শিল্প এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট), পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, মাধবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মাধবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স মার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. রাসিল হক—মোট ১১ জনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, মার লিমিটেড নামে কোম্পানি শাহপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি কারখানা পরিচালনা করে আসছে। কারখানাটি ড্রাই স্টার্চ পাউডার উৎপাদন করে আসছে। কারখানার কার্যক্রমের ফলে প্রচুর তরল বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। অথচ কোনো রকম শোধন ছাড়াই এসব বর্জ্য পাশের এক্তিয়ারপুর খালে গিয়ে পড়ছে। এতে স্থানীয় ছাতিয়াইন ইউনিয়নের শ্রমিতপুর, দাসপাড়া, ছাতিয়াইন উত্তর, ছাতিয়াইন দক্ষিণ, সাকুচাইল, পিয়াইম, শিমুলঘর গ্রামসহ একাধিক এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়ছেন। এতে এলাকার কৃষিজমি ও গবাদিপশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বেলার নোটিশে আরও উল্লেখ রয়েছে, অসহনীয় এ দূষণের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেও সমাধান পাননি। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওই কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব সেবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, খাল, কৃষিজমি ও গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তা আদায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাটি পরিবেশ ও প্রতিবেশের চরম ক্ষতি করছে। তাই স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারখানাটি গত তিন মাস আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরও প্রশাসনের অগোচরে ওই কর্তৃপক্ষ পুনরায় কারখানা চালু করেছে কি না, সেটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কারখানার কার্যক্রম জেলাতে কোনোভাবেই পরিচালিত হতে দেওয়া হবে না।