ঢাকায় বিশ্ব স্থানীয়করণ দিবস–২০২৪ উদযাপন
”স্থানীয়করণের মাধ্যমে শিশুদের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ি” – এই স্লোগানে আজ ৩০ জুন ২০২৪ ঢাকায় ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব স্থানীয়করণ দিবস(World Localization Day)পালিত হয়।
২১ শে জুন,২০২৪ এবং জুন মাসের শেষাবধি পর্যন্ত নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, সক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে বিশ্বের প্রতিটি জাতি স্বস্ব দেশকে উন্নত করতে পারে এবং একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে পারে সেই লক্ষ্যে প্রতি বছর সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বর্তমানে আমাদের দেশ বিশ্বায়নের কারণে কঠিন অর্থনৈতিক সংকট ও জলবায়ু বিপর্যয়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। এই কঠিন সংকটের মাঝেও আমাদের দেশে আছে অনেক সম্ভাবনা এবং সক্ষমতা।
স্থানীয়করণের মূল উদ্দেশ্য-দেশীয় পোষাক, খাবার, উৎসব, খেলাধুলা, স্থানীয় শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, ভাষা চর্চা, আদিবাসীদের ঐতিহ্যসহ আরও অনেক কিছুকে তুলে ধরা। পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে স্থানীয়করণের গুরুত্বকে তুলে ধরা।
এবারের স্থানীয়করণ দিবসে আয়োজকেরা শিশুদের জন্য নানা ধরনের আয়োজন করে।এর মূল উদ্দেশ্য শিশুদেরকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে চেনানো, যার মাধ্যমে তারা দেশ সম্পর্কে জানতে পারে, দেশের সমস্যাগুলোকে উত্তরণ করতে পারে এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর দেশ বিনির্মাণে আগামী দিনে এগিয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব স্থানীয়করণ দিবস আয়োজনের শুরুতেই উদ্বোধনী বক্তা গ্রীণপেইজ নিউজ পোর্টাল এর উপদেষ্টা প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুর রহমান, তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা আজ ভুলতে বসেছি। সেগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী ছিল।
এ সকল জিনিসকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। এক্ষেত্রে আজকের এই আয়োজনের মত সচেতনতা তৈরিতে আমাদেরকে আরো কাজ করতে হবে। যাতে করে শিশুরা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারে।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের চেয়্যারম্যান এম এ মান্নান মনির স্যার বলেন, আমাদের শিশুরা আজ দেশীয় খাবার, ফলমূল সম্পর্কে জানেনা। বিজ্ঞাপনের প্রভাবে তারা আজ দেশীয় সব খাবারের নাম ভুলতে বসেছে।
আমাদের দেশের এই ঐতিহ্যবাহী খাবার ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে অবহিত করতে হবে, তা না হলে আমরা একটি বড় ধরনের অস্তিত্ব সংকটে পড়বো এবং এর ফলাফল হবে দেশের সার্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক ও আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এর একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। আমাদের সংস্কৃতিতে ও জীবনযাত্রায় পলিথিন ব্যাগের কোন স্থান ছিল না কিন্তু এখন সর্বত্রই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বক্তা তার বক্তব্যে সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান, আজ থেকে আমরা সকলেই প্রতিজ্ঞা করব পলিথিন ব্যাগ বর্জনের জন্য এবং এর পরিবর্তে আমাদের দেশীয় পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার শুরু করব। আমরা যদি এই একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি তাহলেও আমাদের পরিবেশকে অনেকাংশে রক্ষা করতে পারব। আর এটাই হবে আমাদের স্থানীয়করণের সার্থকতা।
সমাপনী বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী স্থানীয়করণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, স্থানীয়করণ হচ্ছে এমন একটি ধারণা যার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে চিনতে পারি, জানতে পারি এবং এর মাধ্যমে আমাদের দেশে যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আছে সেসকল সমস্যাগুলোও সমাধান করতে পারি।
গাউস পিয়ারী আরো বলেন, আজকের এই আয়োজনে অনেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা সকলে আমাদের দেশ সম্পর্কে জানুন এবং দেশের যে ইতিবাচক দিকগুলো আছে সেগুলোকে ধারণ করুন এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭৪টি দেশে “বিশ্ব স্থানীয়করণ দিবস” উদযাপন করা হচ্ছে। এই উদযাপনের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হল দেশকে চেনার মাধ্যমে পৃথিবীকে জয় করা।