টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি, হুমকিতে পরিবেশ
ঢাকার ধামরাইয়ে টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এ কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এমনকি ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া ও গাছের ফল নষ্ট হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ এ কারখানায় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ তাদের।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের লিঙ্করোড ধামরাইয়ের কেলিয়া-রোয়াইল সড়কের পাশে রোয়াইল ইউনিয়নের সুঙ্গর গ্রামে দেড় থেকে দুই বছর আগে টায়ার পুড়িয়ে কালো জ্বালানি তেল তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন ঢাকার দেবু সাহা নামে এক ব্যক্তি। তিনি এ কারখানার নাম ‘ডিএমবি রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট’ বললেও কোথাও কোনো সাইনবোর্ড নেই। কারখানাটিতে প্রায় ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কারখানাটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা বাস, ট্রাক, সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের পুরোনো টায়ার কাঠের আগুনের তাপে গলিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের কালো তেল এবং কালি। এর পাশাপাশি পোড়ানো টায়ারের ভেতর থেকে বের করা হয় লোহা তৈরির কাঁচামালও।
এসব টায়ার পোড়ানোয় বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। বাতাসের সঙ্গে বিষাক্ত এ ধোঁয়া ও কালি মিশে পড়ছে আশপাশের বসতবাড়ি, গাছ ও ফসলি জমিতে। এতে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়াসহ এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা কাশি, অ্যাজমা ও হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গাছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফল। প্রশাসনের অনুমোদনহীন অবৈধ এ কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগও রয়েছে।
স্থানীয় সবজি চাষি জাকির হোসেন বলেন, এই টায়ার পোড়ানোর কারখানা এলাকায় গড়ে তোলার পর থেকে সবজির উৎপাদনও কমে গেছে। গাছে ফল আসার পরই তা ঝরে পড়ে যায়। দ্রুত এই কারখানা বন্ধ করা উচিত। প্রশাসনের লোকজন এই কারখানার পাশ দিয়ে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
টায়ার পুড়িয়ে কালো তেল তৈরির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে কারখানার মালিক দেবু সাহা বলেন, টায়ার পোড়ানো হয় না, রিসাইক্লিং করা হয়। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
এরপরও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির জন্য এক বছর আগে আবেদন করা হয়েছে। এখনও অনুমতি পাননি। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন বলে জানান।
তবে রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পেরে কিছুদিন আগে এ কারখানায় গিয়েছিলেন। এ কারখানার জন্য তিনি ট্রেড লাইসেন্স দেননি বলে জানান।
ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, অনুমোদনহীন ও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া অধৈব কর্মকাণ্ড চালিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করলে খুব শিগগির ওই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমবি রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি বা ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি।
ধামরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, সুঙ্গর গ্রামে টায়ার পুড়িয়ে তেল তৈরির কারখানা আছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে বিষয়টি খুব দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।