জীবিত মানুষের ফুসফুসের গভীরে প্রথম বারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে
ফুসফুসের অস্ত্রোপচারে প্রতি ১৩ জনের মধ্যে ১১ জনের টিস্যুতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গিয়েছে এবং তার মধ্যে পলিপ্রোপিলিন ও পিইটি সবচেয়ে সাধারণ।
মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন সমগ্র গ্রহকে দূষিত করছে, মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীরতম মহাসাগর পর্যন্ত। ছবি: ডেভিড কেলি
জীবিত মানুষের ফুসফুসের গভীরে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরিক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা প্রায় সবগুলি নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এখন গ্রহ জুড়ে সর্বব্যাপী এবং মানবদেহে ব্যপকভাবে এগুলো প্রবেশ করছে এবং এর অর্থ “ইহা দ্বারা মানব জাতির স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির বিষয়ে একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ তৈরী হয়েছে”।
ফুসফুসের অস্ত্রোপচার করা ১৩ জন রোগীর কাছ থেকে সংগ্রহকৃত টিস্যু থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছিল এবং ১১ টি ক্ষেত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে সাধারণ কণাগুলি ছিল পলিপ্রোপিলিন এবং পিইটি যা প্লাস্টিকের প্যাকেজিং, পাইপ এবং বোতলে ব্যবহৃত হয়। এর আগের দুটি গবেষণায় ময়নাতদন্তের সময়ও ফুসফুসের টিস্যুতে একইভাবে উচ্চ হারে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
আমরা ইতিমধ্যেই শ্বাস নেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করার বিষয়টি জেনে গেছি। উচ্চ মাত্রার মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংস্পর্শে থাকা শ্রমিকরা মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সর্ম্পকিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে।
মার্চ, ২০২২, মাসে প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক সনাক্ত করা হয়েছিল, যথায় দেখা গিয়েছিল যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলি শরীরের থিলৈল চারপাশে ভ্রমন করতে পারে এবং বিভিন্ন অঙ্গে প্রবেশ করতে পারে।
গবেষকরা এতদবিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হলো মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি গবেষণাগারে মানব কোষের ক্ষতি করে এবং বায়ু দূষণের কণাগুলি ইতিমধ্যেই শরীরে প্রবেশ করে এবং এর কারণে বছরে লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক মৃত্যুর কারণ হিসাবে পরিচিত ৷
গবেষণার একজন সিনিয়র লেখক যুক্তরাজ্যের হুল ইয়র্ক মেডিকেল স্কুলের লরা সাডোফস্কি বলেছেন, “আমরা ফুসফুসের নীচের অঞ্চলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বা আমরা যে আকারের কণা পেয়েছি তা আশা করিনি।
এটি আশ্চর্যজনক কারণ ফুসফুসের নীচের অংশে শ্বাসনালীগুলি ছোট এবং আমরা আশা করতাম যে এই আকারের কণাগুলি এই গভীরে যাওয়ার আগে ফিল্টার হয়ে যাবে বা আটকে যাবে।”
তিনি বলেন “এই তথ্য বায়ু দূষণ, মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং মানব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি প্রদর্শণ করে এবং ইহা স্বাস্থ্যের প্রভাব নির্ধারণের জন্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত পরিস্থিতি তৈরি করতে তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।“
এই গবেষণাটি টোটাল এনভায়রনমেন্ট জার্নাল সায়েন্স এ প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। ইহাতে সার্জারির লক্ষ্যগুলির পাশে থেকে সুস্থ ফুসফুসের টিস্যুর নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে যাতে ০.০০৩ মিমি আকারে কণাকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং ব্যবহৃত হয়েছে।
২০২১ সালে ব্রাজিলে ময়নাতদন্তের নমুনার উপর একটি সমীক্ষায় প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১৩ জনের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যাদের গড় বয়স যারা Sadofsky-এর গবেষণার মূল্যায়ন করেছিল তাদের চেয়ে বেশি। প্লাস্টিকের ব্যাগে ব্যবহৃত পলিথিন ছিল সবচেয়ে সাধারণ কণাগুলির মধ্যে একটি।
গবেষকরা উপসংহারে এসেছিলেন: “স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর ফলাফলগুলি হলো শ্বাস নেওয়ার সময়েই মাইক্রোপ্লাস্টিক কনাগুলো শ্বাসযন্ত্রের ভিতরে প্রবেশ করেছে।”
১৯৯৮ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগীদের উপর একটি মার্কিন সমীক্ষা ১০০ টিরও বেশি নমুনায় প্লাস্টিক এবং উদ্ভিদ ফাইবার (যেমন তুলা) পাওয়া গেছে। ক্যান্সারযুক্ত টিস্যুতে ৯৭% নমুনায় এবং অ-ক্যান্সারযুক্ত নমুনায় ৮৩% ফাইবার পাওয়া গিয়েছিল।
পরিবেশে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীরতম মহাসাগর পর্যন্ত সমগ্র গ্রহকে দূষিত করছে। গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রুণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক একটি পর্যালোচনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক দ্বারা ক্যান্সারের ঝুঁকির মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং উপসংহারে এসেছে: “কীভাবে মাইক্রো এবং ন্যানোপ্লাস্টিকগুলি (Micro and nano plastics )মানবদেহের কাঠামো এবং প্রক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করে এবং কীভাবে তারা কোষকে রূপান্তরিত করতে পারে এবং কার্সিনোজেনেসিস (Carcinogenesis)কে প্ররোচিত করতে পারে সে সম্পর্কে আরও বিশদ গবেষণা জরুরিভাবে প্রয়োজন, বিশেষ করে এই গভেষণার আলোকে।”
গার্ডিয়ান প্রত্রিকা হতে বাংলা অনুবাদ করেছেন
রহমান মাহফুজ