জলাবদ্ধতা নিরসনে সচেতন হতে হবে রাজধানীবাসীকে
দোকান থেকে চিপস, বিস্কুট, কেক বা যেকোনও পানীয় কিনে খাওয়ার পর বেশিরভাগ পথচারীকে সেই প্যাকেট বা বোতল ডাস্টবিনে না ফেলে হরহামেশা রাস্তায় বা ফুটপাতে ফেলতে দেখা যায় নগরবাসীকে। পরে সেই পলিথিনের প্যাকেট চলে যায় ড্রেনে। এতে করে পানি নিষ্কাশনের যে ব্যবস্থা, তাতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, আর ভোগান্তিতে পড়েন পুরো নগরবাসী।
নগরবাসীর সচেতনতার অভাবে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার চিত্র প্রতিদিনই দেখা যায়। এনিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা নেই। এই ময়লা-আবর্জনার কারণেও নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীতে অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় খাল-বিল, নালা দখল হয়ে যাওয়ায় এবং ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করাও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।
জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন রাজধানীবাসী। একইসঙ্গে নগরবিদরা বলছেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের অভাবে ও নাগরিক দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া নালা-নর্দমা-খাল সব দখল হয়ে যাওয়ার কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে ড্রেনের পানি নদী পথে যেতে না পারার কারণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী সজিব খান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিদিন রাজধানীর ময়লা-আবর্জনা বা অন্য যেসব বর্জ্য আছে, তা ব্যবস্থাপনা কাজ করা হয়। কিন্তু এর কোনও আধুনিকায়ন নেই। ড্রেনের ময়লা ভালো করে পরিষ্কার করা হয় না।
প্রতিদিন রাস্তায় যে ময়লা জমে, তাও সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা হয় না। এভাবে অল্প অল্প করে ময়লা জমতে জমতে একসময় ড্রেনে অনেক ময়লা জমে যায়। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। এখন ড্রেন যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকে, তাহলে তো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবেই।
তবে এক্ষেত্রে রাজধানীবাসীকেও দায়ী করে এই পরিবেশকর্মী বলেন, মানুষের ন্যূনতম বিবেক ও কমনসেন্স নেই। কমবেশী সবাই রাস্তায় ও ফুটপাতে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে। দিন শেষে তাদের কর্মের ফলেই তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেশের সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়ে মানুষের উচিত— যত্রতত্র ময়লা না ফেলা। এই দায়িত্বটুকু নিজের থেকে পালন করলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।
রাজধানীর পুরনো খাল ও নালাগুলো দখলমুক্ত না করতে পারলে জলাবদ্ধতার যে সমস্যা, তা সমাধান হবে না বলে উল্লেখ করেন নগরবাসী। রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জাবেদ হোসাইন বলেন, ২০ বছর আগেও যেসব এলাকায় খাল ছিল, আজ তার কোনও অস্তিত্ব নেই। সব দখল হয়ে গেছে।
এর সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত। যে কারণে বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরেও এই খালগুলো দখলমুক্ত হচ্ছে না। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের উপায় বের করতে হলে যেসব খাল এখনও অবশিষ্ট আছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার করে পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করতে হবে। তাহলেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।