জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বাড়ছে বৃষ্টিপাত-বন্যা ও খরার তীব্রতা
গোটা বিশ্বে তীব্র দাবদাহ, অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃষ্টিপাত, বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো ঘটনা ঘটছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর বেশির ভাগই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
শনিবার ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ : ক্লাইমেট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিগত দুই দশকে জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমিকা রেখেছে।
জলবায়ু ও তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধানের বিষয়টি ‘অ্যাট্রিবিউশন সায়েন্স’ নামে পরিচিত। নিজেদের গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা এ রকম শত শত ‘অ্যাট্রিবিউশন’ সামনে নিয়ে এসেছেন।
গবেষণাটির সহগবেষক পরিবেশবিজ্ঞানী বেন ক্লার্ক বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে প্রায় সব দাবদাহই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরো তীব্র হয়েছে এবং আরো বেশি সংখ্যায় দেখা দিয়েছে। ’
গতানুগতিকভাবে দাবদাহের আশঙ্কা আগের তুলনায় বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডাব্লিউএমএ) বলছে, ভারত ও পাকিস্তানে গত এপ্রিলের দাবদাহে তাপমাত্রা ছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দাবদাহের আশঙ্কা ৩০ গুণ বাড়িয়ে তুলেছিল জলবায়ু পরিবর্তন।
বৃষ্টিপাত ও বন্যা
চলতি বছর চীনে ও বাংলাদেশে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিদ্যমান আর্দ্রতার কারণে বন্যা ও বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝোড়ো মেঘ ভাঙার আগেই অত্যন্ত ‘ভারী’ হয়ে পড়ছে। তবে অঞ্চলভেদে এর প্রভাবে ভিন্নতা রয়েছে। অনেক অঞ্চলে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হচ্ছে না বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়।
ঘূর্ণিঝড়
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিকভাবে ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা বৃদ্ধি না পেলেও তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকরা এ বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে এগুলো স্থলভাগে স্থবির হয়ে পড়ছে এবং একক এলাকায় এ কারণে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে।
খরা
খরায় জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা সম্পর্কেও জানা গেছে। গবেষণা বলছে, পূর্ব আফ্রিকার খরার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের। হর্ন অব আফ্রিকায় পৌঁছানোর আগেই ভারত সাগরের উষ্ণ পানির কারণে মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে সমুদ্রে।
বাড়বে দাবদাহ
এদিকে পৃথক এক গবেষণা বলছে, ভারত ও পাকিস্তানের দাবদাহ ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রতিবছরই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিসংখ্যক দাবদাহ দেখা দেবে। এ থেকে খাদ্যসংকট তৈরি হবে, মৃত্যুর ঘটনা বাড়বে এবং এক পর্যায়ে শরণার্থীর ঢল নামবে।
তবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখলে ওই সব ঘটনা ঘটবে না। গবেষণাটি ‘আর্থস ফিউচার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাটি করেছেন সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গথেনবার্গের গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, দাবদাহ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিবছর অর্ধশত কোটি মানুষ এর কারণে ভুক্তভোগী হবে।