জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও বেশি দূর্ঘটনা ও মৃত্যু হতে পারে
( The Verge এ প্রকাশিত জলবায়ুর গবেষণার বাংলারূপ)
মূল: Justine Calma
বাংলা রূপ: রহমান মাহফুজ ও সাদিয়া নূর পর্শিয়া
অস্বাভাবিক আবহওয়ার সময় ডুবে মরা, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা উঠানামা করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ডুবে মরা, পড়ে মরা এবং হামলার মতো দূর্ঘটনায় অতিরিক্ত ২,১৩৫ জন মারা যেতে পারে।
লন্ডন, কলম্বিয়া ও হার্ভার্ডের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকদের অনুসন্ধানগুলি সম্প্রতি Nature Medicine পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাপমাত্রার উঠানামা-তাপ বা শীতের অস্বাভাবিক স্থিতি- এবং দূর্ঘটনাগুলির মধ্যে সম্পর্ক এখনও ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, তবে গবেষকরা বলেছেন যে তাদের অনুমানগুলি মৃত্যু রোধের প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করবে।
গবেষণায় একটি অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্র
উক্ত প্রকাশিত গবেষণার লেখকরা বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে জড়িত ক্ষতিগুলির দিকে তাকানো গবেষণার অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্র ছিল। গবেষণায় পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তণ কীভাবে গরম জনিত অসুস্থতা বা মশা বাহিত রোগের মতো কারনগুলো দ্বারা মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তণে প্রভাবিত হয়ে অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া এবং তাপজনিত পীড়নে প্রায় ২,৫০,০০০ লোক মারা যেতে পারে।
কিন্তু প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দূর্ঘটনার কারনে ৫ মিলিয়ন লোক মারা যায় যার মধ্যে প্রতি দশজনের মধ্যে প্রায় এক জনের মৃত্যুর কারণ হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে।
এ দূর্ঘটনাগুলির অনেকগুলি প্রতিরোধ করা যেতে পারে, এ কারণেই লেখকরা বলেছেন যে, তাদেরকে এ সম্ভাব্য বিপর্যয়যুক্ত জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে আরো ভাল ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির জন্য প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।
তারা যে ক্ষতিগুলি পর্যবেক্ষণ করছিল তার মধ্যে ডুবে মরা, পড়ে মরা এবং গাড়ি দূর্ঘটনাসহ কয়েকটি ছিল অনিচ্ছাকৃত। গবেষণায় হামলা এবং আত্মহত্যার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ আহতদের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছিল, যা পরিবর্তিত গ্রহের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের সমাধান করা কতটা জরুরি তা নির্দেশ করে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চতর গড় মাসিক তাপমাত্রার সাথে একই হারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় আত্মহত্যার হার বেড়েছে।
একটি লুকানো বোঝা
গবেষণাটির শীর্ষস্থানীয় লেখক এবং কলম্বিয়ার পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সহযোগী রবি পার্কস, “The Verge” কে বলেছেন যে, “গবেষণাটি তুলে ধরেছে যে, মানসিক স্বাস্থ্য কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের নয়, সাধারণভাবে পরিবেশগত প্রদর্শনের একটি লুকানো বোঝা হিসাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ”।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা নিয়ে আরও গবেষণা করা উচিত। পার্কস বলেন যে, “আমাদের ফলাফল প্রকাশ করে যে, সেখানে হয়ত ভাল কিছু থাকতে পারে, বিশেষত অল্প বয়সীদের মধ্যে,”।
তাপমাত্রার উঠানামার সময় আত্মহত্যা এবং অন্যান্য ধরণের দূর্ঘটনা কেন বৃদ্ধি পায় তার কারণ ঠিকমতো বোঝা যায় না। ডুবে যাওয়া তাও মানুষের শীতল হওয়ার জন্য সাঁতার কাটার সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে।
গবেষকরা আরো লক্ষ্য করেছেন যে, মানুষ গরম আবহওয়ায় বেশি উত্তেজিত হয় এবং বেশি মদ পান করে- যা যানবাহন দূর্ঘটনা এবং হামলার কারণ হতে পারে। অন্যান্য গবেষণা উচ্চতর তাপমাত্রাকে আরও সহিংস অপরাধের সাথে যুক্ত করেছে।
বিপরীত দিকে, শীতল আবহওয়া বেশি ঝাঁপ দিয়ে পড়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। তবে এ গবেষণায় দেখা গেছে যে, উষ্ণতর তাপমাত্রা প্রকৃতপক্ষে প্রাপ্তবয়স্কদের ঝাঁপ দিয়ে পড়ার এবং আহত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় মৃত্যুর সিংহভাগই গাড়ি দূর্ঘটনাসহ পরিবহন দূর্ঘটনাগুলি আনুপাতিক ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সের তরুণদের মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি এবং ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস এবং ফ্লোরিডা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ক্যালিফোর্নিয়া টেক্সাস এবং ফ্লোরিডা
এ সংখ্যাগুলি পেতে, গবেষকরা ১৯৮০-২০১৭ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (হাওয়াই এবং আলাস্কা বাদে) দূর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন এবং প্রতি মাসে অস্বাভবিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে তুলনা করেছেন।
তার ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রার সাথে জড়িত আহতের সংখ্যা অনুমান করার জন্য এ তথ্যটি ব্যবহার করেছিল। জলবায়ুর ফলে যদি তাপমাত্রা প্রাক শিল্প স্তর (১৭৫০ সালের পূর্ব স্তর) এর থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, তবে গবেষকরা আরও ১৬০০ টি দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন।
তবে বর্তমান নীতিগুলির ভিত্তিতে, এটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গবেষকরা অনুমান করেছেন যে, বিশ্ব যদি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়, যার লক্ষ্য তাপমাত্রার বৃদ্ধি প্রাক শিল্প স্তরের চেয়ে ২ ডিগ্রি বৃদ্ধিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি রয়েছে।
উজ্জ্বল দিকটি হল, এরুপ গবেষণা সে ফলাফলকে পরিবর্তণ করতে সক্ষম। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের লেখক ও অধ্যাপক মজিদ এজাতি একটি বিবৃতিতে বলেছেন,” জরুরি সেবা, সামাজিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্য সতর্কতার ক্ষেত্রে আমাদের আরও ভাল প্রস্তুতি নিয়ে এ হুমকির জবাব দেওয়া দরকার।
গবেষণায় বলা হয়, “মৃত্যুর সংখ্যা আর্থ- সামাজিক অবস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং পরামর্শের উপস্থিতির মতো বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে। ব্যাক্তিগত গাড়ি চালানোর বিকল্প হিসাবে ভাল গণপরিবহনে ভ্রমণ করা চরম আবহওয়ায় গাড়ি চালানোর ঝুঁকিও হ্রাস করতে পারে।
আমাদের এ হুমকিতে সাড়া দিতে হবে
গবেষণার বিষয়ে Nature Medicine এর লেখকরা খোলাখোলিভাবে মত দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতের গবেষণার সময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কীভাবে আরও বেশি আহত করতে পারে এমন প্রসঙ্গ আসলে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের মতো অন্যান্য বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত।
স্থান, জাতি এবং আয়ের মতো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কীভাবে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়গুলো আলাদাভাবে প্রভাবিত হতে পারে, সে সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্যও এটি আহবান জানিয়েছে। সম্পাদকীয় বিভাগের লেখক বলেন, “দূর্ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবসহ একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়”।
Source: The Verge