জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত অবস তার মধ্যে অন্যতম। ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয় অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। আর তার ফলে এই অঞ্চলে তীব্র পানি সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
হিমালয়কেন্দ্রিক যে আটটি দেশের ওপর অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রভাব পড়বে, বাংলাদেশও রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এই সংকট নিরসনে পার্বত্য এলাকায় নগরায়নের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশও করা হয়েছে। সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে এখন থেকে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে অসময়ে অনাবৃষ্টি, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ অতি গরম আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের উপকূলীয় এলাকা এবং সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকা। দেশের জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই জনসংখ্যার জন্য কৃষি জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনে হিমালয়ের নগরায়ন বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ হিসেবে পর্যটন ও তীর্থযাত্রাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন বেড়ে যাওয়ায় ঝরনা ও নদীনির্ভর পানি ব্যবস্থাপনার প্রতি নির্ভরতাও বেড়েছে।
পুরো হিমালয় অঞ্চল ছড়িয়ে আছে ৪২ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে, যা আটটি দেশের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চল হিমালয়ের এই দ্রুততর অপরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কোটি কোটি মানুষ গভীর পানি সংকটে পড়বে।
হিমালয় পর্বত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলো তাদের পৌর এলাকায় অবস্থিত পানির উৎসগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। পর্বতে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ভূগর্ভে থাকা পানির ওপর নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। পার্বত্য অঞ্চলে পানির সংকটের পাশাপাশি দূষণ ও মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
এই সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ২০০৯-এ বলতে পেরেছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কি করা উচিত, বিশ্বের কি করা উচিত। এ বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে সহায়তার জন্য প্রণীত হয়েছে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০।
পানি ও পরিবেশবিষয়ক লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে এ পরিকল্পনায় সময়ভিত্তিক সুনির্দিষ্টকরণ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সামনে আসলে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উচিত এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। সূত্র: ভোরের কাগজ