জলবায়ু পরিবর্তণ বিষয়ে বড় একটি সুখবর এটি – এর পূর্বে কেউ কখনো শোনেনি
(The Forbes এ গত ১৮ জানুয়ারী ২০২০ এ প্রকাশিত জলবায়ু বিষয়ক প্রবন্ধের বাংলারূপ)
মূল: Roger Pielke
বাংলারূপ: রহমান মাহফুজ ও সাদয়িা নূর পর্শিয়া
২০১২ সালে সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অকল্পনীয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছিল এবং তা আমরা কেউই খেয়াল করিনি। সে বছর ব্যক্তি প্রতি কার্বণ ডাই অক্সাইড নির্গমনের গড় হার (Per Capita) সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল এবং তারপর হতেই গড় হার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
যদি তা হয়ে থাকে, তবে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে নাটকীয়ভাবে কার্বন মুক্ত করার জন্য বিশ্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রাপ্ত ফলাফল হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। জাতিসংঘের প্রাক্কলন অনুয়ায়ী , ২০২০ সালের জনসংখ্যা প্রায় ~ ৪.৮ বিলিয়ন মানুষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১০০ সালে ~ ১০.৯ বিলিয়ন দাঁড়াবে।
এর অর্থ হল কার্বণ ডাই অক্সাইড নিঃসরন হ্রাস করার একমাত্র উপায় হল ব্যক্তি প্রতি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা, তবে আমরা ১৯৭৬ সালের Sci-fi Logan’s Run১ সিনেমার গল্পের মতো জনসংখ্যা হ্রাস করব না।
আসুন কিছু তথ্যের দিকে লক্ষ্য করি। নীচের চিত্রেটিতে ১৯৭৯ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যের জীবাশ্ম জ্বালানী ( ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কয়লা ইত্যাদি) এবং শিল্প থেকে বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু কার্বণ ডাই অক্সাইড নির্গমন দেখানো হয়েছে।
১৯৭০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পর্যবেক্ষনগুলি হচ্ছে, নির্গমণ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (International Energy Agency -IEA) এবং জাতিসংঘের তথ্য ব্যবহার করে জনসংখ্যার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০১৯ থেকে ২০৪০ পর্যন্ত সময় কালের দুটি চিত্রের মাধ্যমে মাথাপিছু নির্গমণ দেখায়। লাল রেখাটি দ্বারা IEA এর বর্তমান পদ্ধতির স্থিত অবস্থা (Current Policy Scenario – CPS) এর অধীনে কার্বন নির্গমন দেখানো হয়েছে – যদি সরকাররা তাদের বিদ্যমান নীতিমালা এবং পদক্ষেপগুলিতে কোনও পরিবর্তন না আনে, তবে বিশ্বব্যাপী কীভাবে জ্বালানী বাজার বিকশিত হবে তা তুলে ধরা হয়েছে।
গ্রীন লাইন IEA দ্বারা স্থিত নীতি পরিস্থিতি (IEA Stated Policies Scenario -SPS) এর অধীনে কার্বন নির্গমনকে দেখানো হয়েছে – বিদ্যমান নীতি কাঠামোর প্রভাব ও বর্তমানে কার্বন নির্গমণ হ্রাসের ঘোষিত নীতিমালার উদ্দেশ্যগুলোকে প্রতিফলিত করেছে।
কার্বণ ডাই অক্সাইড নির্গমণের বর্তমান পদ্ধতির স্থিত অবস্থা (CPS) অধীনে ২০৩০ দশকের শেষের দিকে ২০১২ এর উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যাবে না। স্থিত নীতি পরিস্থিতি (SPS) অনুসারে ২০৪০ সালে বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু কার্বণ ডাই অক্সাইড নির্গমণ অবিচ্ছিন্নভাবে নিচে নেমে আসবে।
সরকারগুলি যদি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রæতি মেনে চলেন , তবে আমরা বলতে পারি পৃথিবী তার মাথা পিছু কার্বন নির্গমণের সর্বোচ্চ পর্যায় আগেই অর্থাৎ ২০১২ সালেই সমাপ্ত করেছে। উদাহরন স্বরুপ, IEA এর কাছাকাছি সময়গুলোর পরিস্থিতিগুলির বিপরীতে জলবায়ু পরিবর্তণের পঞ্চম মূল্যায়ন প্রতিবেদনের প্রকল্পের আন্তঃসরকারী প্যানেল (The Intergovernmental Panel on Climate Change IPCC, AR5 ) এর বেশিরভাগ বেসলাইন দৃশ্যাবলী ২০৪০ এর মাথাপিছু কার্বণ ডাই অক্সাইড নিঃসরনে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০৪০ সালের প্রকল্পে AR5 বেসলাইনের ৯০% এরও বেশি IEA এর বর্তমান নীতি পরিস্থিাতি (CPS) গুলির তুলনায় মাথাপিছু নির্গমনের পরিমান এবং IEA স্থিত নীতি পরিস্থিতি (SPS) গুলির তুলনায় প্রায় ৯৮% বেশি – এটি ২৪০ এরও বেশি দৃশ্যের মধ্যে ৫টি।
IEA এবং IPCC র উপর ভিত্তি করে অনুমানগুলির মধ্যে বৃহত্তর পার্থক্য – জলবায়ু গবেষনা ও নীতি সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতিফলিত এবং পুনর্বিবেচনা করা উচিত। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মাথাপিছু (Percapita) কার্বন নির্গমন ৪.৮ টনের চেয়ে কিছুট কম এবং ২০৪০ সাালের জন্য দুটি ওঊঅ পরিস্থিতি মাথাপিছু (Percapita) কার্বন নির্গমন ~ ৪.২ টন (ঝচঝ) এবং ~ ৫.০ টন(CPS) নির্গমণকে প্রকাশ করে। বিপরীতে, ৬০% IPCC, AR5 (Percapita) কার্বন নির্গমন ~ ৬.০ টন ছাড়িয়ে যাওয়া এবং উক্ত পরিস্থিতিতে মাথাপিছু ~ ৯ টনেরও বেশি কার্বন নির্গমন প্রকাশ করে।
IEA এর স্বল্প মেয়াদী শক্তি দৃষ্টিভঙ্গি (অন্যান্য স্বল্প মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি ) IPCC র সাম্প্রতিক কর্মকান্ড এবং এটি যে গবেষণার উপর নির্ভর করে, তার সাথে সামঞ্জস্য নয়। IPCC র আসন্ন ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি এ বিষয়গুলিকে কিভাবে প্রকাশ করবে তা এখন দেখার বিষয়।
তাহলে কি বিশ্ব ২০১২ সালে মাথাপিছু কার্বণ ডাই অক্সাইড নির্গমনের সর্বোচ্চ উচ্চতা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ? বিখ্যাত জলবায়ু আর্থনীতি গবেষক ও লেখক নিল বোর ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, এটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে, বিশেষ করে ভবিষ্যতের কি হবে সত্যিই ইহা বলা কঠিন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং পরবর্তী কয়েক দশকের সবচেয়ে বেশী পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু কার্বণ ডাই অক্সাইড নির্গমন সর্বাধিক উচ্চতায় উঠে যাওয়ার আংশকা রয়েছে এবং আমরা সেটিকে লক্ষ্য করিনি।
কার্বণ ডাই অক্সাইডের মাথাপিছু নির্গমণকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠা আমাদের উচ্চাঙ্খার কার্বন নির্গমন হ্রাসের চ্যালেঞ্জ (challenge of deep decarburization) কে সহজ করে না – এ চ্যালেঞ্জটি মানসিকভাবে আমাদের উপর অনাঙ্খিত বিশাল চাপ সেৃষ্টি করছে। তবে ইহা এটা বুঝায় না যে আমাদের পিছনে পর্যাপ্ত এমন সহায়ক কিছু রয়েছে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন ভুতূরে নিয়তির বিপরীতে আশার আলো দেখাতে পারে।
ROGER PIELKE: তিনি ২০০১ সাল থেকে University of Colorado তে কর্মরত আছেন । যেখানে তিনি বিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের নীতি ও প্রশাসন সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে পড়ালেখা করেন এবং লিখেন।
টিকা:
1. Sci-fi Logan’s Run: মাইকেল অ্যান্ডারসন পরিচালিত একটি আমেরিকান বিজ্ঞান কল্প কাহিণী ভিত্তিক হলিউড সিনেমা।
আগামী ২৩০০ শতাব্দিতে পৃথিবীতে অত্যধিক জনসংখ্যার চাপে মানুষ ও খাদ্য সরবরাহের মধ্যে যখন ভারসাম্য থাকবে না তখন কিভাবে পৃথিবীর একটি দেশে মানুষ ও খাদ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে তার উপর ভিত্তি করেই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে।
সিনেমাটিতে ২৩০০ শতাব্দিতে পৃথিবীতে ইউটোপীয় নামক একটি সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ ও খাদ্য সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন মানুষের বয়স যখন ৩০ বছর পৌঁছবে তখনই তাকে মেরে ফেলার নিয়ম দেখানো হয়েছে – এ নিয়মকে ভিত্তি করেই সিনেমার ঘটনা আবর্তিত হয়েছে।
সিনেমার কাহিনিটি উলিয়াম এফ নোলান এভং জর্জ ক্লেটন জনসনের লেখা ” লোগান রান” বইটি হতে নেয়া হয়েছে। এ ছবিতে মাইকেল ইয়র্ক, জেনি আগুটার, রিচার্ড জর্ডান, রসকো লি ব্রাউন, ফারাহ ফাউসেট ও পিটার উস্তিনভ অভিনয় করেছে।
Source: The Forbes and Wikipedia