জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা সমস্যা নয়, বরং এটি ব্যবসার সুযোগে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন বাস্তবতা। এই ঝুঁকিকে শুধু কমপ্লায়েন্স ইস্যু না ভেবে ব্যবসায়িক কৌশলগত সমস্যা হিসেবে দেখা দরকার। এর ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ঢাকায় দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরাম’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তৈরি পোশাকশিল্পে পরিবেশসম্মত টেকসই উন্নয়নের পথ ত্বরান্বিত করতে সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের (বিএই) উদ্যোগে রবিবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারের প্রতিনিধি, জলবায়ুবিশেষজ্ঞ, বিদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাড়ে চার শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
সম্মেলনটি আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল অ্যাপারেল ইমপ্যাক্ট ইনস্টিটিউট, ক্যাসকেল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জিআইজেড, এইচঅ্যান্ডএম, ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস, পিডিএস ও টার্গেট।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা বা অভিযোজন কাঠামো নির্মাণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার।
জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু ঝুঁকি নয়, সম্ভাবনাও আছে। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা সুযোগগুলো উন্মুক্ত করছে। এতে ব্যবসা প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ কম, মাত্র ২ শতাংশ। এটিকে আরও বাড়াতে হবে। টেকসই ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়াতে বৃহত্তম ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, কীভাবে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, তা উদ্যোক্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে কম খরচে পণ্য উৎপাদন করাটাই বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তব ঝুঁকি, যা অবশ্যই মনে রাখা দরকার।
ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতিটি ভগ্নাংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমানোর বিষয়ে সবার দায়িত্ব রয়েছে।
জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই, নিরাপদ ও স্থিতিস্থাপক উপায়ে জ্বালানি চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা দরকার।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও) মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা কোনো বোঝা নয়, বরং উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ব্যবসায়িক সুযোগ—আমি এভাবে ভাবি। সস্তা শ্রম বাংলাদেশের জন্য এখন আর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নয়।
উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা যদি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করি তাহলে সফল হতে পারব না। লক্ষ্য অর্জনে উৎপাদনকারীদের আরও সামষ্টিক দায়িত্ব নিতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমর্থনও প্রয়োজন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স থিজ ওয়াউডস্ট্রা। প্যানেল আলোচনা ও কর্মশালায় ৪০ জন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। তাঁরা সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ু স্থিতিস্থাপক ও কার্বন–নিরপেক্ষ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলায় জোর দেন।
এ ছাড়া বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান আর্মস্ট্রং ফ্লুইড টেকনোলজি, ফোর্বস মার্শাল, গ্রান্ট থর্নটন ভারত এলএলপি, ইলুকুম্বুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন এবং জিনকো সোলারের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে সম্মেলনে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ হয়। এই পর্বে তৈরি পোশাকশিল্পের তিন শতাধিক প্রকৌশলী অংশ নেন।