জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা হতে যাচ্ছে ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র
‘ক্লিন এনার্জি’ বা পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় মাইলফলক হতে চলেছে নতুন ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা ‘জিওথার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’। সম্প্রতি এক শীর্ষ ইউটিলিটি কোম্পানির সমর্থন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নতুন জিওথার্মাল পাওয়ারপ্ল্যান্ট, যেটিকে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সেই লক্ষ্যে, চারশ মেগাওয়াট পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে হিউস্টনভিত্তিক কোম্পানি ‘ফারভো এনার্জি’, যা প্রায় চার লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মতো যথেষ্ট।
শনিবার ফারভো বলেছে, তাদের এই নতুন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানা থেকে বিদ্যুৎ কিনবে ইউটিলিটি কোম্পানি ‘সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন’।
এমনকি এই পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন প্রচলিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমাবে বলে দাবি গবেষকদের।
“নতুন প্রজন্মের ভূ-তাপীয় বিদ্যুতের দাম কমানোর ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ অনেক সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে,” বলেন ‘প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি’র ‘এনার্জি সিস্টেম’ বিভাগের গবেষক উইলসন রিক্স।
যদি এইসব কেনার মাধ্যমে মাটি থেকে এই প্রযুক্তি তুলে আনা যায়, তবে তা গোটা বিশ্বকে ডিকার্বোনাইজেশন বা কার্বন মুক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব রাখতে পারে।
কার্বন মুক্তকরণ বলতে বোঝায়, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও মিথেন তৈরি করে এমন বিভিন্ন জিনিস অপসারণ করা, যে কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে থাকে। আর এর পরিবর্তে বিভিন্ন এমন মেশিন ও পদ্ধতি ব্যবহার করা, যেখানে এ ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই।
ফারভো’র পরিকল্পনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারাহ জুয়েট বলেন, ‘গোটা বিশ্ব এখনও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানীর ওপর নির্ভর করে। তবে, নতুন এই চুক্তি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, এ কারণেই এটি এত রোমাঞ্চকর। এটি বিশেষ কোনো শক্তির উৎস নয়, যা বিশেষ ধরনের কাজেই ব্যবহার করতে হয়। এটি এমন একটা বিষয় যেটি সহজেই পাওয়া যায়, কিন্তু এর সুযোগ আমরা এতোদিন নেইনি। আর আগামীতে এর পরিসর বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
জিওথার্মাল প্ল্যান্টের প্রথম প্রজন্মের উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ‘ক্যালিফোর্নিয়ার গিজার’-এর কথা, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি বাষ্প বা খুব গরম পানির অতি উত্তপ্ত জলাধার তৈরি করেছে। আর এ ধরনের জলাধার কিছুটা বিরল।
‘ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর তথ্য অনুসারে, ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে অন্যতম নেতৃত্বদানকারী দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে, দেশটির সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে এর ভূমিকা আধা শতাংশেরও কম।
২০২১ সালে নতুন ভূ-তাপীয় শক্তি বিকাশের লক্ষ্যে গুগলের সঙ্গে বিশ্বের প্রথম কর্পোরেট চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ফারভো। এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যে তিনটি কূপও খনন করে কোম্পানিটি। এ ছাড়া, গত বছরের নভেম্বর থেকে নেভাডা গ্রিডের বিভিন্ন পাওয়ার সেন্টারে কার্বন-মুক্ত বিদ্যুৎ পাঠানো শুরু করে প্রকল্পটি।