জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য খাত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবসভ্যতার মুখোমুখি হওয়া একক বৃহত্তম স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। চরম তাপমাত্রা, বায়ুদূষণ ও সংক্রামক রোগের বিস্তার বৃদ্ধি এর কয়েকটি কারণ।
ডাব্লিউএইচওর মতে, মানব স্বাস্থ্যের বিপর্যয়কর প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত লাখ লাখ মৃত্যু এড়াতে গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি অবশ্যই প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে।
বর্তমান জাতীয় কার্বন নিঃসরণ পরিকল্পনার অধীনে বিশ্ব এই শতাব্দীতে ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের পথে রয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই পুরোপুরি নিরাপদে না থাকলেও নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, অভিবাসী ও গ্রিনহাউস গ্যাস সবচেয়ে কম নিঃসৃত করা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন।
চরম তাপমাত্রা
এ বছর সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার রেকর্ড হবে বলে ব্যাপকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণতা অব্যাহত রয়েছে, তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে আরো ঘন ঘন এবং তীব্র তাপপ্রবাহ আসতে যাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে গবেষকরা জানিয়েছেন, গত গ্রীষ্মে ইউরোপে তাপের কারণে ৭০ হাজারেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এ সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের অগ্রগতিসংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সংস্থা ল্যানসেট কাউন্টডাউন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে মানুষ গড়ে ৮৬ দিন প্রাণঘাতী তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসেছে।
বায়ুদূষণ
বিশ্বের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ এমন বায়ুতে শ্বাস নেয়, যা ডাব্লিউএইচওর বায়ুদূষণের নির্দেশিকা অতিক্রম করেছে। ডাব্লিউএইচওর হিসাব অনুযায়ী, জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে বায়ু দূষিত হওয়ায় প্রতিবছর বিশ্বে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এটি শ্বাসতন্ত্রের রোগ, স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
এসব ঝুঁকিকে তামাকের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এসব ক্ষতির জন্য আংশিকভাবে পিএম২.৫ ক্ষুদ্র কণা দায়ী। পিএম২.৫ কণার বেশির ভাগই আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই ক্ষুদ্র কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে, সেখান থেকে রক্তে মিশে যায়।
তবে কয়লা পোড়ানোর প্রভাব হ্রাসের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৫ সাল থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ১৬ শতাংশ কমে যাওয়ায় বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যু কমেছে বলে ল্যানসেট কাউন্টডাউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সংক্রামক রোগ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মশা, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের চিরায়ত অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। তাই তাদের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মতো মশাবাহিত রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
তাপমাত্রা বাড়তে থাকা পৃথিবীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা, এমনকি আঘাত-পরবর্তী মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যারা এরই মধ্যে এসব নিয়ে ভুগছেন তাদের ওপর বিষয়গুলো প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।