জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে পারছে না বিশ্ব
নানা উদ্যোগের পরেও আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে পারছে না বিশ্ব। একদিকে জলবায়ু সম্মেলন করে সব দেশ মিলে নিচ্ছে নানা সিদ্ধান্ত, অন্যদিকে প্রায় প্রত্যেক দেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে নিচ্ছে আলাদা আলাদা উদ্যোগ। এত আয়োজন সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
সম্প্রতি দুবাইয়ে একদিনে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা তাদের সারা বছরের বৃষ্টির রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের দেশের তাপমাত্রা এবার গ্রীষ্মের শুরুতেই ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকার তাপমাত্রাও বাড়ছে হু হু করে। এই তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু ও পরিবেশ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সারা পৃথিবীতে উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তা সম্ভব।
দুবাইয়ে সারা বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, মাঝেমধ্যেই ভারী বর্ষণও হয়ে থাকে। গত ১৮ এপ্রিল দুবাইয়ের আল-আইন শহরে ২৪ ঘণ্টায় ২৫৬ মিলিমিটার (১০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের ১৫ এপ্রিলে তাপমাত্রা ওঠে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে। রবিবার (২১ এপ্রিল) তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে। এটি এ বছর আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, প্রতিবছর আবহাওয়া এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে উত্তপ্ত থাকে। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেলে আমরা তাকে তাপপ্রবাহ বলি। আর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে আমরা তীব্র তাপপ্রবাহ বলি। ৪২ ডিগ্রির উপরে হলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে ১১ এপ্রিল থেকে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে প্রথম কারণ হচ্ছে, বৃষ্টিপাত কম, মেঘমুক্ত আকাশ। দুই নম্বর কারণ হচ্ছে, ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ ও বিহার হয়ে একটি হিট লো’র (তাপজনিত কারণে তৈরি হওয়া লঘুচাপ) বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।
এর প্রভাবে তাপের আধিক্য থাকে। এদিকে সূর্যের কিরণকাল বেশি, প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ধরে রোদ পড়ছে, বায়ুর গতিবেগ কম, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। এলনিনো এপ্রিল পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে। গতবছরও এলনিনোর প্রভাব বেশি ছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রসঙ্গত, এলনিনো হলো সাউদার্ন অসকিলেশন (ইএনএসও) নামে আবহাওয়ার ধরনের দুটি অংশ, যা ক্রান্তীয় পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর বাতাসের ধরন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার একটি অনিয়মিত কিন্তু পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন। এলনিনো বলতে ইএনএসওর উষ্ণায়ন পর্যায়কে বোঝায়।
এদিকে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, এ সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। এক-দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষের খুব বেশি কষ্ট হয় না। প্রভাবটা বেশি পড়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের ওপর।
সেজন্য এখন সারা বিশ্বে বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উষ্ণতা নিয়ে যে আলোচনা হয়, তার সঙ্গে জীববৈচিত্রের ওপর এই উষ্ণতার প্রভাব নিয়েও গবেষণা ও আলোচনা প্রয়োজন।
তিনি তাপমাত্রা থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে দিনের বেলায় সূর্য তাপ ছড়াতে শুরু করার আগে কাজ শুরু করার কথা বলেন। কৃষক চাইলে ভোর থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন। অন্যদিকে শহরের মানুষ যাদের আয়ের জন্য বের হতেই হয় তাদের চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন তা মেনে চলার কথা বলেন আইনুন নিশাত।