জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২১০০ সালে মৃত্যুর হার বাড়বে
সাধারণভাবে রোগশোক, জরা ও দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়। এর বাইরে প্রচণ্ড তাপ থেকে মৃত্যুর হার ভবিষ্যতে বাড়বে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঠান্ডাজনিত মৃত্যুর চেয়ে তাপের কারণে মৃত্যুর হার বাড়বে।
বিজ্ঞানীদের হিসাবে, চরম তাপ ও ঠান্ডার কারণে প্রতিবছর শুধু ইউরোপেই প্রায় চার লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানে একই কারণে মৃত্যুর হার বেশি।
যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কার্যকরভাবে লড়াই করা না যায়, তাহলে ২১০০ সাল নাগাদ বছরে আরও ৫৫ হাজার মানুষ মারা যাবে। ইউরোপীয় কমিশনের গবেষকেরা নতুন এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে মৃত্যুর হার বাড়বে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
বর্তমানে শুধু ইউরোপের তাপমাত্রা-সম্পর্কিত মৃত্যুর বেশির ভাগ কারণই ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এখন প্রচণ্ড তাপ একটি ক্রমবর্ধমান প্রাণঘাতী চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ ইউরোপ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই অঞ্চলের বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বেশি বলে ঝুঁকিও বেশি। তাপের কারণে ভবিষ্যতের মৃত্যুর হার নিয়ে দ্য ল্যানসেটে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার এখন প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়েলকাম ট্রাস্টের গবেষক ম্যাডেলিন থমসন বলেন, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য অংশে ক্রমবর্ধমান হারে বেশি গরম দিনের সংখ্যা বাড়ছে। এতে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে।
ইউরোপজুড়ে ৩০টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৪০০ অঞ্চলের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড তাপ ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে। ২১০০ সালের তাপমাত্রা আরও বাড়বে, আর তখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের মৃত্যুর হার বাড়বে।
১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, ইউরোপজুড়ে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার মৃত্যু হয়েছে ঠান্ডার কারণে। আর ৪৪ হাজার মৃত্যু হয় বেশি গরমের কারণে। পূর্ব ইউরোপে ঠান্ডার কারণে বেশি মানুষ মারা যায় আর প্রচণ্ড তাপের কারণে দক্ষিণ ইউরোপে প্রাণহানি ঘটে। এই আঞ্চলিক বৈষম্য ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনে ঠান্ডাজনিত মৃত্যু ভবিষ্যতে বাড়বে। স্পেন, ইতালি, গ্রিস ও ফ্রান্সের কিছু অংশে সবচেয়ে বেশি তাপজনিত মৃত্যু দেখা যাবে।
বিজ্ঞানী রেবেকা এমার্টন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাপপ্রবাহ ঘন ও তীব্রতর হবে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে। গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চরম তাপ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি দুর্বল গোষ্ঠী ও কর্মীদের সুরক্ষার পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের ওপর দৃষ্টির কথা বলেন। প্রচণ্ড তাপ মৃত্যুর বাইরেও বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। প্রচণ্ড গরমে কাজ করার কারণে নারীদের গর্ভপাতের উচ্চ ঝুঁকি থাকে ও মানসিক অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।