জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাতক্ষীরায় মারা যাচ্ছে রেইনট্রি
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি কমে গেছে। কয়েক বছরে মাটিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। এ কারণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে প্রায় দেড় হাজার রেইনট্রি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
রাস্তার দুই পাশে থাকা সারি সারি এ গাছগুলো এখন বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ডাল ভেঙে আহত হচ্ছেন পথচারীরা। প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন।
সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ডাল ভেঙে হতাহতের শঙ্কায় এ পথে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন আক্তার বলেন, রেইনট্রি গাছ মরে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাটির লবণাক্ততা ও ক্ষার বেড়ে যাওয়া।
তাছাড়া প্রত্যেক গাছের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। মৌসুমি বৃষ্টি না হলে রেইনট্রি গাছ খাদ্য সংকটে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও গাছ মরে যেতে পারে।
বছরখানেক আগে সাতক্ষীরার সড়ক থেকে মারা যাওয়া রেইনট্রি গাছগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। তারা এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও এতদিনেও সেগুলো কাটতে পারেনি জেলা পরিষদ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ ও সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে সড়কটি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের ধুলিহর বাজারের পাশে কয়েক মাস আগে ডাল ভেঙে স্কুলছাত্র প্রণব সরকার গুরুতর আহত হয়। সে আশাশুনি সদরের শংকর সরকারের ছেলে।
সম্প্রতি সড়কের মালির মোড়ের কাছে চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর ডাল ভেঙে পড়ায় মারাত্মক আহত হন সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের আরশাদ আলী ওরফে ভোলা। তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানায় পরিবার।
গত কোরবানি ঈদের দিন মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে সড়কের মেল্লেকবাড়ী মোড়ের কাছে ডাল ভেঙে গুরুতর আহত হন মোটরসাইকেল আরোহী ফারুক ইসলাম।
সাতক্ষীরা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ জানান, সড়কটির দুই পাশে অসংখ্য মরা রেইনট্রি গাছ এখন যাত্রীবাহী যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রায়ই শুকনা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যাত্রীবাহী বাসের ওপর। এতে করে যাত্রীসহ বাস চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কটি।’
তিনি দ্রুত এসব মরা রেইনট্রি গাছ অপসারণ করে সড়কটি নিরাপদ রাখতে জেলা পরিষদসহ সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জনবহুল ও ব্যস্ততম একটি সড়কে সহস্রাধিক মরা রেইনট্রি গাছ দীর্ঘদিনেও অপসারণ হয়নি। দায়িত্বে এত অবহেলা কেন? এ সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে।’
তিনি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সব মরা গাছ অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব মরা গাছ অপসারণ করা হবে। এসব গাছের আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করার জন্য সামাজিক বন বিভাগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করার পর দরপত্র আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’