জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝাঁকুনি বাড়ছে উড়ন্ত বিমানের
লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট মাঝ আকাশে চরম ঝাঁকুনির মধ্যে পড়ে। গত মঙ্গলবারের এ ঘটনায় এক ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যুও হয়। আহত হন প্রায় ৩০ যাত্রী।
বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সচরাচর এ ধরনের ঝাঁকুনির ঘটনা না ঘটলেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ওই ফ্লাইটে যা ঘটেছিল, তাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা ছিল কিনা, তা জানতে প্রথমেই বুঝতে হবে, ঝাঁকুনিটি আসলে কোন ধরনের ছিল এবং তা কতটা অনুভূত হয়েছে।
মাঝ আকাশে বিমানের এই ধরনের ঝাঁকুনিকে সহজভাবে বায়ুর অনিয়মিত চলাচল হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যা বায়ুপ্রবাহের স্রোত সৃষ্টি করে। যখন এ স্রোত সমতলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, তখন বিমানটি রোল, পিচ বা হঠাৎ একটি নির্দিষ্ট স্তরের উচ্চতায় নেমে যেতে পারে।
মাঝ আকাশে বিমানে ঝাঁকুনি হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। পাহাড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাস থেকে মেঘ ও বৈরী আবহাওয়ার জন্যও এমনটি হতে পারে।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ৩২১ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে কোনটি হয়েছে, তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে এটি ‘ক্লিয়ার এয়ার’ ঝাঁকুনি বা বজ্রঝড় হতে পারে।
ক্লিয়ার এয়ার ঝাঁকুনি তখনই ঘটে, যখন জেট স্ট্রিমের মধ্যে বা এর চারপাশে বাতাসের দিক পরিবর্তন হয়। এটি বাতাসের একটি দ্রুত প্রবাহিত অবস্থা, যা সাধারণত ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ফুট উচ্চতায় পাওয়া যায়।
গত বছর রিডিং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, উত্তর আটলান্টিকে ১৯৭৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই পরিষ্কার বাতাসের ঘটনা থেকে চরম ঝাঁকুনি ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
তারা বলেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধির কারণে উষ্ণ বাতাস জেট স্রোতে বাতাসের গতি পরিবর্তন করছে। এই ধরনের ঝাঁকুনি পাইলটদের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশ করা অত্যন্ত কঠিন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী ও ওই গবেষণার সহলেখক অধ্যাপক পল উইলিয়ামস গত বছর বলেছিলেন, ‘আমাদের উচিত উন্নত টার্বুলেন্স পূর্বাভাস এবং শনাক্তকরণ সিস্টেমে বিনিয়োগ করা, যাতে আগামী দশকে রুক্ষ বাতাসকে বাম্পিয়ার ফ্লাইটে পরিবর্তন করা থেকে রোধ করা যায়।’
এই ঝাঁকুনি হওয়ার ক্ষেত্রে বজ্র সৃষ্টিকারী কিউমুলোনিম্বাস মেঘও দায়ী হতে পারে। এ মেঘে খুব শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ থাকে, যা হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা ১০টি পরমাণু বোমার আকারের মতো শক্তি বহন করতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবার যখন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমানটি উড়ছিল, তখন মিয়ানমারে কাছাকাছি বজ্রপাত হয়েছিল। জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞান সংস্থা আইপিসিসির মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে।