জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সাগরে রেকর্ড তাপমাত্রা চরমে পৌঁছাচ্ছে
বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য থেকে বিশ্ব ক্রমে দূরে যাচ্ছে বলে মনে করেন জলবায়ুবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে স্থলভাগ ও সাগরের তাপমাত্রায় রেকর্ড হয়েছে।
অথচ দেশগুলো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী নভেম্বরে দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন (কপ-২৮) অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে গত জুন মাসের শুরুর দিকে জার্মানির বন শহরে একত্র হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) জানায়, সেখানে আলোচনা হয়, কিছুদিন ধরে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর তাপমাত্রা শিল্পযুগের আগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রয়েছে।
যদিও এর আগে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম করেছিল, তবে উত্তর গোলার্ধে এমনটা হয়নি। উত্তর গোলার্ধে গত ১ জুন থেকে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। এর আগে এপ্রিল ও মে মাসে সাগরের তাপমাত্রা আগের রেকর্ড ভেঙেছিল। জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এল নিনো ফিরছে। এটি মূলত খরা পরিস্থিতি।
বিশ্বের শীর্ষ দুই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। চীনের রাজধানী বেইজিং গত জুন মাসে তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অন্যদিকে তীব্র দাবদাহ আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পায়নপূর্ব যুগের থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণে চুক্তি সই হয়।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এই সীমার মধ্যে আটকে রাখা যাবে না। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও) গত মে মাসে এক পূর্বাভাসে জানায়, এখন থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে অন্তত ৩৬৫ দিন বা পুরো এক বছর সময়ের তাপমাত্রা শিল্পায়নপূর্ব যুগের থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম আবহাওয়ার মাত্রা ও বিস্তৃতি বাড়ছে। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে খরা দেখা গেছে। অন্যদিকে বিরল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে আফ্রিকায়।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) সতর্ক করে বলেছে, কপ-২৮ সামনে রেখে বন শহরে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে ‘ঘাটতি’ রয়েছে। সংস্থাটির মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি ও অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।