কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলাসহ ছোট-বড় সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পঞ্চম দফায় বন্যার কবলে পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট।
শুক্রবার সকাল থেকে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে ধরলা নদীর পানি সকাল থেকেই সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫-সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ কারণে মোগলহাট ইউনিয়নের বুমকা, ফলিমারী চরের আবাদি জমিসহ বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলিমারী এলাকার একমাত্র মসজিদটি রক্ষায় প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।
পানি বাড়ার কারণে লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকয় নদীভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলার সদর উপজেলার মোগলহাট, গোকুন্ডা, তিস্তা, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোবরধন, নন্ডিমারী, আরাজি ছালাপাক, বারঘরিয়া, চৌরাহা, কালীগঞ্জের কাকিনা, বৈরাতি এলাকার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গত কয়েক দিনে তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙনে এক হাজার বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু আদিতমারী উপজেলায় কয়েক দিনে তিস্তার ভাঙনে মহিষখোঁচা ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবার নতুন তিস্তার পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে সলিড স্পার-২ বাঁধে যাওয়ার একমাত্র পাকা রাস্তাটি।
শুক্রবার সকাল থেকে এলাকাবাসী পাকা রাস্তাটির ওপর বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে পানির গতি পথ রোধ করার চেষ্টা করেছে।
মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, নতুন করে বন্যায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, পানিবন্দি পরিবারগুলোর পাশে প্রশাসনের লোকজন সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কত পরিবার পানিবন্দি রয়েছে সেটার কাজ প্রনয়ন চলছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১শ ১৫ মেট্রিকটন চাল শুকনা খাবার দেয়া শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।