ম্যাজিক জাল কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর। এতে নির্বিচারে পোনাসহ সব ধরনের মা মাছ ধরা পড়ছে। সেই সাথে কুচিয়া, ব্যাঙ, সাপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীও মারা পড়ছে
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে খাল-বিল, বাওড়, নদী-নালা ও জলাশয়ে “ম্যাজিক জালের” ফাঁদ পেতে নির্বিচারে ছোট-বড় মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার নদ-নদীর দেশীয় মাছ। এ জালের ব্যবহার বন্ধ না হলেও কয়েক বছরের মধ্যে স্থানীয় প্রজাতির দেশীয় মাছ একেবারেই বিলুপ্তি হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সেই সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে জলজ জীব-বৈচিত্র্য।
কাশিয়ানী উপজেলার তারাইল গ্রামের মৎস্যজীবি বাবলু মাঝি জানান, চীনের ম্যাজিক জাল এক ধরনের বিশেষ ফাঁদ। এটি প্রায় ৬০ থেকে ৮০ ফুট লম্বা। ছোট ছোট কক্ষ বিশিষ্ট খোপের মত। এ জাল খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে বাঁশের খুঁটির সাথে জালের দু’মাথা বেঁধে পেতে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পর তুললে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ এ জালে আটকা পড়ে।
ওই মৎস্যজীবী আরও জানান, কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ী, ঘৃতকান্দি, তালতলা, ঘোনাপাড়া, বিদ্যাধর, পারুলিয়া, রাহুথড়, পুইশুর, দেবাশুর, সিংগা বিলসহ অধিকাংশ বিলের জেলেরা ম্যাজিক জাল নামের বিশেষ এ ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পোনাসহ সব ধরনের মা মাছ শিকার করছেন। সেই সাথে কুচি, ব্যাঙ, সাপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মারা পড়ছে বলে জানান ওই মৎস্যজীবী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া গ্রামের দু’জন জেলে জানান, ম্যাজিক জালে খুব সহজেই প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। বর্ষার শুরু থেকে তারা এ জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। কারেন্ট জালের চেয়ে ম্যাজিক জালে বেশি মাছ ধরা পড়ে। এতে বেশি আয় হয়। এ কারণে মৎস্যজীবীরা ম্যাজিক জালের প্রতি ঝুঁকেছেন। প্রতিটি ম্যাজিক জালের দাম ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। ম্যাজিক জালে প্রচুর মাছ ধরাপড়ায় কয়েক দিনের মধ্যে জালের টাকা উঠে আসে। জালগুলো কোথায় কিনতে পাওয়া যায় জানতে চাইলে তারা বলতে রাজি হয়নি। তবে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধ ম্যাজিক জাল গোপনে কেনাবেচার সাথে জড়িত বলেও জানিয়েছেন তারা।
মৎস্য গবেষক আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ম্যাজিক জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত দেশি প্রজাতির পুঁটি, ট্যাংরা, কই, শিং, মাগুর, মেনি, খলিশা, শোল, টাকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ও পোনা ধ্বংস হবে। বিপন্ন হবে কুচিয়া, ব্যাঙ, সাপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় তিনি খুব শীঘ্রই এ জালের ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দেন।
কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ ম্যাজিক জালের অবাধ ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, “অবৈধ ম্যাজিক জাল বা ফাঁদ বিল-বাওর, নদী-নালা, খাল ও মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য সম্পদের জন্য একটি বিরাট হুমকি। এটি বন্ধের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পাওয়ামাত্র দ্রুত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ম্যাজিক জাল বন্ধে মৎস্যজীবীদেরও সচেতন করে তোলা হবে।” সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন