গাছ জলবায়ু পরিবর্তনের কথা আমাদেরকে কি ভাবে জানাতে পারে?
সুলহাত সালেহীন
ভেতরের রিংগুলির বিশেষত্ব দেখে বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারেন গাছটি কত বছরের বয়োবৃদ্ধ/প্রাচীন এবং বছরের প্রতিটি সময়ের আবহাওয়ার ধরন বলে দিতে পারে।
সাধারণত বহুদিনের পুরানো গাছগুলো পৃথিবীর বা ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া রেকর্ড করার আগে থেকে ঐ অঞ্চলের জলবায়ু কেমন ছিল তার সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে।
তবে গাছগুলো আমাদের কি বলে তা অনুধাবন করার জন্য আবহওয়া এবং জলবায়ুর ভিন্নতা কি তা আমাদের জানা প্রয়োজন।
আবহওয়া হলো একটি নিদিষ্ট সময়ের অর্থাৎ এক, বা দুই বা তিন বছরের কোন অঞ্চলের তাপ ও তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ, ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি অবস্থা যা স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটে। অপরদিকে জলবায়ু হলো কোনো অঞ্চলের দীর্ঘ মেয়াদের আবহাওয়ার গড় অবস্থা।
১৮৯১ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষদের বিজ্ঞানীরা আবহাওয়ার উপর নজর রাখছেন। কিন্তু বৃক্ষগুলো পৃথিবীর জলবায়ু সম্পর্কে একটা লম্বা সময় হতে রেকর্ড রাখছে। সাধারণত গাছগুলো কয়েক শত বছর এবং কয়েক হাজার বছর বাচঁতে পারে।
বিজ্ঞানীরা গাছের রিং অধ্যায়নের মাধ্যমে অতীতের জলবায়ু সম্পর্কে জানতে গাছ ব্যবহার করেন। যদি কখনও গাছের লগ (stump) দেখে থাকেন, আপনি সম্ভবত লক্ষ্য করেছন যে স্টাম্পে শী বেশ কয়েকটি রিং রয়েছে। যা দেখতে অনেকটা বুলসায়ি (লক্ষ্য) এর মতো।

গাছের জীবনের প্রতিটি বছরে আবহওয়া কেমন ছিল এবং গাছের বয়স কত এই রিং গুলি আমাদের বলতে পারে। হালকা বর্ণের রিংগুলি কাঠের এমন বৈশিষ্ট্য গুলিকে চিহ্নিত করে যা বসন্ত এবং গ্রীষ্মের শুরুতে বৃদ্ধি পায়, গাঢ় রঙের রিংগুলি চিহ্নিত করে যা গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং গ্রীষ্মের পরে বৃদ্ধি পায়। একটি হালকা রিং ও একটি গাঢ় রিং একএে গাছের জীবনের এক বছরের সমান।
গাছের রিংয়ের রঙ এবং প্রস্থ দ্বারা পূর্ববর্তী সময়ের ঐ অঞ্চলের আবহওয়ার অবস্থার ধারণা দিতে পারে।
যেহেতু গাছগুলি স্থানীয় জলবায়ু যেমন বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা প্রভৃতি পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবেদনশীল হয়ে থাকে ফলে তারা বিজ্ঞানীদের অতীতের ঐ অঞ্চলের স্থানীয় জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা দিতে থাকে।
যেমন গাছের রিংগুলি চওড়া হয় সাধারণত উষ্ণ এবং অধিক বৃষ্টিপাতের বছরে এবং শীত ও শুষ্ক বছর গুলোতে রিংগুলো হালকা (thinner) হয়ে থাকে। কিন্তু গাছটি খরার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখোমুখি হলে গাছগুলো সেই বছরে খুব কম বৃদ্ধি পায়।
বিজ্ঞানীরা নিকটতম আবহাওয়ার স্টেশন থেকে প্রাপ্ত তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের স্থানীয় পরিমাপের সাথে আধুনিক গাছগুলোর তুলনা করেন। তবে খুব পুরানো গাছগুলো রেকর্ড পরিমাপের আগেই ঐ অঞ্চলের জলবায়ু কেমন ছিল ঐ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবন্ত গাছগুলোর মধ্যে একটি হলো মেথুসেলাহ গাছ। ক্যালিফোর্নিয়ার হোয়াইট মাউন্টেনের একটি ব্রিস্টলোন পাইন গাছ হচ্ছে মেথুসেলা। এটি প্রায় ৫ হাজার বছরেরও পুরানো বলে মনে করা হয়।

সাধারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেবলগত ১০০ থেকে ১৫০ বছরের প্রতিদিনের আবহাওয়ার রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। সুতরাং, কয়েকশত থেকে হাজার হাজার বছর আগের জলবায়ু সম্পর্কে জানার জন্য বিজ্ঞানীদের উল্লেখযোগ্য উৎস হচ্ছে গাছ, প্রবাল এবং বরফের কোর ( হিমবা থেকে বেরিয়ে যাওয়া বরফের স্থর)।
আমাদের কি রিংগুলি দেখার জন্য কোন গাছ কেটে ফেলতে হবে?
মোটেও না,আপনি ইনক্রিমেন্ট বোরার নামক যন্ত্রের সাহায্যে কোনো গাছের একটি নমুনা সংগ্রহ করে ঐ গাছের রিংগুলো গণনা করতে পারেন। বোরার মূলত কাঠের একটি পাতলা ফালা বের করে যা গাছের মাঝখানে যেতে পারে।
পরে আপনি যখন গাছের ফালাটি টেনে আনবেন তখন ঐ কাঠের ফালাই রিংগুলো গণনা করা যায় এবং এতে গাছের কোন ক্ষতি হয় না বরং গাছটি সুস্থ সবল থাকে।
উটার,মনটি-ল্যাসাল জাতীয় বনভূমিতে একটি উন্নত বোরার যন্ত্রের মাধ্যমে যেকোন শিক্ষার্থী একটি গাছের কোর স্যাম্পল কিভাবে নিতে হয় তা শিখতে পারে। ক্রেডিট :ইউএসডিএ
