গাছেদের পেরেকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ৭ জেলা ঘুরে ওয়াহিদ সরদার এখন ঢাকায়

আমরা সবাই জানি যে, “গাছের জীবন আছে, গাছে পেরেক মারলে গাছ কষ্ট পায়” কিন্তু আমরা কি সেটা মন থেকে অনুভব করি? গাছের কষ্ট কি আমাদের আন্দোলিত করে? অথচ এই অনুভূতি থেকে সুদূর যশোর জেলা থেকে এখন ঢাকায় ওয়াহিদ সরদার।
শুরুতেই যশোর জেলায় মহা সড়কের পাশের গাছ থেকে পেরেক অপসারণ করা শুরু করেন ওয়াহিদ সরদার তারপর ঝিনাইদহসহ সাতটি জেলার গাছ থেকে গত আড়াই বছরে প্রায় দশ হাজার গাছে থেকে প্রায় সাড়ে চারশো কেজি পেরেক অপসারণ করে এখন ঢাকায় এসেছেন আব্দুল ওয়াহিদ সরদার।
২০১৮ সালে বিবিসি, ওয়াহিদ সরদারের গাছের পেরেক তোলা নিয়ে প্রতিবেদন করে আর এরপরেই তার এই কাজের প্রতি মানুষের মানসিকতা বদলে যায় এবং তিনিও অনেক উৎসাহপান এই কাজের জন্যে। যদিও প্রথমে অবশ্য সবাই তাঁকে পাগল মনে করেছিলেন আবার কোথাও কোথাও তো মানুষ রীতিমতো খাপ্পা হয়ে উঠেছিল তাঁর উপর।
বড়ো বড়ো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের প্রচারবস্তু, গাছের গা থেকে সরিয়ে দেন সবই। আর এর ফলে প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন তিনি। অবশ্য অনেকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। অচেনা জায়গায় রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন কেউ কেউ।
মাথায় কৃষকদের টুপিতে লাল-সবুজ রং যেন বাংলাদেশের জীবন্ত প্রতীক হয়ে যশোর জেলা থেকে সাইকেলে চড়ে রাজধানী ঢাকায় এসেছেন আব্দুল ওয়াহিদ সরদার।
কেন তিনি ঢাকায়? কী তার পরিকল্পনা ?
রাজধানীর গাছ থেকে পেরেক তুলতে একটি বস্তা আর একটি শাবলের আকৃতির লোহার দণ্ড সাইকেলের পিছনে বেধেঁ নিয়ে এসছেন। লোহার দণ্ড দিয়ে গাছে লাগানো পেরেক তুলে বস্তায় জমা করেন আর মনে করিয়ে দিতে চান গাছেরও যে প্রাণ আছে আর তার ব্যথা-যন্ত্রণা বোধও আছে।
ওয়াহিদ সরদার যিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি বলেন, “গাছেরাই তাঁর সন্তান” তাই তার মন সবসময় পড়ে থাকে গাছেদের কাছে। ২০০৬ সালেই নিজের জেলায় শুরু করেছিলেন গাছ লাগানোর কাজ। বারো বছর ধরে এই কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু এরপর তাঁর মনে হল, রাস্তায় গাছের গায়ে যে নির্দ্বিধায় মানুষ পোস্টার, ব্যানার লাগাতে পেরেক পুঁতে চলেছে, এর তো একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

০১৮ সালের এপ্রিল মাসেই তাই বেরিয়ে পড়লেন সাইকেল নিয়ে। প্রথমে যশোর জেলায়, তারপর ঝিনাইদহ, খুলনা সহ ৭টি জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন এই আড়াই বছরে। সংগ্রহ করেছেন মোট ৪৫০ কেজি পেরেক।
ওয়াহিদ সরদার বিশ্বাস করেন, একদিন মানুষ সচেতন হবেন। এভাবে গাছেদের শরীরে লোহার পেরেক পুঁতে দেওয়া হবে না আর। আর সেদিনের মানুষের সামনে এই সময়ের ভয়ঙ্কর বাস্তবতাকে তুলে ধরতেই সমস্ত পেরেক জমিয়ে রাখছেন ওয়াহিদ সরদার। এই সংগ্রহই সেদিন হয়ে উঠবে একটি মিউজিয়াম। ওয়াহিদ বলেন, যতদিন শরীরে জোর থাকবে, ততদিন এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন তিনি। মানুষকে তিনি বোঝাবেন, গাছেরাও ব্যথা পায়।