কেরু কোম্পানির বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এলাকাবাসী
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল ও ডিস্টিলারি কেরু এন্ড কোম্পানির বয়লারের চিমনি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ছাই বাতাসে মিশে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে চিনিকলের আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কারণে এলাকায় এভাবে পরিবেশ দূষণের ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। পরিবেশদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
জানা যায়, ১৯৩৮ সালে জেলার সীমান্তবর্তী জনপদ দর্শনায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল স্থাপিত হয়।
চিনিকলের উপজাত চিটাগুড় ব্যবহার করে বাংলামদ, বিলাতিমদ, রেক্টিফাইড ও ডিনেচার্ড স্পিরিট, মল্টেড ভিনেগার উৎপাদন করতে ডিস্টিলারি ও ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত বেশ কয়েক প্রকার মাদার টিংচার উৎপাদনের জন্য ফার্মাসিটিক্যাল (যা বর্তমানে বিলুপ্ত) স্থাপন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনকালে পুরো এলাকাটি ছিল ফাঁকা মাঠ। তখন আশপাশের গ্রামগুলোতেও জনবসতি ছিল কম। তবুও প্রতিষ্ঠানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওই সময় পরিবেশ দূষণ ও সেই সাথে এলাকায় বসবাসকারীদের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে চিনিকলের বয়লারের ধোঁয়া নির্গমনের জন্য ১৫০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন শুরু করে।
সে সময় বয়লারের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হতো কয়লা ও ভালো মানের জ্বালানি কাঠ। দীর্ঘ উচ্চতাসম্পন্ন চিমনি দিয়ে বয়লারের নির্গত ধোঁয়া সহজেই বাতাসে মিশে অনেক ওপর দিয়ে দূরে চলে যেত। ফলে বায়ু দূষণের আশঙ্কাও ছিল কম।
সেই থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এলাকার মানুষের তেমন একটা অসুবিধা ছিল না। কালক্রমে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে চিনিকলের আশপাশের ফাঁকা জায়গায় জনবসতি গড়ে উঠে।
বর্তমানে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর সাথে সংযুক্ত হয়ে পুরো এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়ে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন সময়ে অজ্ঞাত কারণে চিনিকলের চিমনির উচ্চতা কমেছে প্রায় ৩০-৩৫ ফুট। যার ফলে বয়লারের ধোঁয়ার সঙ্গে বের হওয়া ছাই খুব বেশিদুরে যেতে পারেনা।
মিল সূত্রে জানা গেছে, মিলে নুতন বয়লার স্থাপন করা হয়েছে এবং সেই সাথে জ্বালানির তালিকায় কাঠ, ব্যাগাসের সঙ্গে নুতন করে যোগ হয়েছে ফার্নেস অয়েল।
তাতে একদিকে চিমনির স্বল্প উচ্চতা অপর দিকে অপরিকল্পিতভাবে নিন্মমানের জ্বালানি ব্যাবহারের ফলে চিমনি থেকে নির্গত মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ছাই ও বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত কালো ধোঁয়া এলাকার পরিবেশ দূষণে যোগ হয়েছে নুতন মাত্রা।
একইসাথে জ্বালানি হিসাবে প্রতি বছর নানা প্রজাতির হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ঘটনাটি ত্বরান্বিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে কেরু এন্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, গত ৮৪ বছর ধরে একই ভাবে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমরা নতুন কিছু কাজ করেছি।
চিমনির মুখে ছাকনি দেয়া আছে যাতে ছাই না বেড়িয়ে শুধু ধোঁয়া বের হয় সেজন্য। আপনি বললেন আমরা আসপাশের এলাকা দেখে চিমনি থেকে যেন ছাই না বের হয় সে ব্যাবস্থা নেব।