কুয়াকাটায় বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় হুমকিতে পরিবেশ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গঙ্গামতি এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বা বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশে কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাগরের কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিক দেওয়াল হিসেবে পরিচিত এ বনাঞ্চল এভাবে উজাড় হওয়ায় উপকূলবাসী শঙ্কিত।
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুধু গঙ্গামতি এলাকায় সাগরের কোল ঘেঁষে ২০০৮-০৯ সালে প্রায় ১০ হাজার আকাশমণি গাছ সৃজন করা হয়।
এ বনে আকাশমণি ছাড়াও হরতকী, বহেরা, রেইনট্রি, গামারিসহ নানা প্রজাতির গাছ আছে। সৈকতের মাটির ক্ষয়রোধ, বন্যা-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় মানুষের জান-মাল রক্ষায় এ সব গাছ কার্যকর ভূমিকা রেখে আসছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জলোচ্ছ্বাসের সময় চলে আসা বালুতে গাছের শ্বাসমূল ঢাকা পড়লে, কিছু গাছ মরে যায়। স্থানীয় একটি চক্র এ সব মরা গাছসহ বাগান থেকে বিনা বাধায় গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করছে।
বুধবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সৈকতের বিভিন্ন স্থানে কাটা গাছ। ৪ জন শ্রমিককে এসব গাছ অন্যত্র সরিয়ে নিতেও দেখা যায়। একটু দূরে ৩-৪ জনকে দেখা যায় গাছ কাটতে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা প্রথমে নাম–পরিচয় জানাতে রাজি হননি। পরে তাদের ২ জন নিজেদের নাম বেল্লাল হোসেন ও আলম এবং তাদের বাড়ি চর গঙ্গামতি এলাকায় বলে পরিচয় দেন।
তারা বলেন, এ সব গাছ জোয়ারের পানির চাপে উপড়ে গেছে। কিছু গাছ আগেই মরে গেছে। তা ছাড়া এগুলো ভালো জাতের নয়। এগুলো কাটলে বনের তেমন ক্ষতি হবে না।
বেল্লাল হোসেন বলেন, আমরা বন বিভাগের লোকজনকে বলেই গাছগুলো কাটছি। তারাই এসব গাছ কেটে নিতে বলেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন মৃধা বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় আমরা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকি। সাগর পাড়ের এ সব গাছ প্রাকৃতিক দেওয়াল হিসেবে আমাদের জান-মাল রক্ষা করে। এ সব গাছ নিধন হলে আমাদের দুর্যোগ ঝুঁকি বাড়বে।’
জানতে চাইলে বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সংরক্ষিত বনের গাছ এভাবে কাটা হচ্ছে, তা আমি জানতাম না। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ২ বছরে গঙ্গামতি এলাকায় গাছ কাটার ঘটনায় ২০টির মতো মামলা করা হয়েছে এবং মামলাগুলো চলমান আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলার) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, ‘এমনিতেই উপকূলীয় এলাকা দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশি বেশি গাছ রোপণ করা দরকার। গাছ কাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিবেশ সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’