কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভোগান্তি
ফসল আবাদসহ সবকিছুতে ভূগর্ভস্থ পানিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে এখন বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে গেছে। অন্যদিকে কৃষিজমিতে বেড়েছে প্রাণঘাতী কীটনাশকের ব্যবহার। গত ২০ বছরে এর মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই দুই কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির সংকটের ঐতিহাসিকতা অনুধাবন এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে প্রাণঘাতী কীটনাশকের প্রভাব শীর্ষক দুটি গবেষণার সমীক্ষা উপস্থাপন সভায় গবেষকেরা এসব কথা বলেছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও সবুজ সংহতি, রাজশাহী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দেশের খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলসহ হাওর, মানিকগঞ্জের নদী, চরাঞ্চলসহ উপকূলীয় অঞ্চলের সাতক্ষীরা মোট চারটি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলে ১০০টি বেল স্টাডি গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে প্রাণঘাতী কীটনাশকের প্রভাব জানার চেষ্টা করেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকটের ঐতিহাসিকতা অনুধাবন শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা ও প্রাথমিক তথ্য উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অভিজিৎ রয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও সবুজ সংহতি, রাজশাহী আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি গবেষণা উপস্থাপন করেন।
অভিজিৎ রয় বলেন, প্রাচীন আমল থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চল একটি খরাপ্রবণ এলাকা। প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ থেকে গৌড় আমল থেকে সুলতানি পর্যন্ত ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবস্থাপনার আমূল উন্নয়ন হলেও ব্রিটিশ আমলে এসে স্থানীয় পানির উৎসগুলোকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পানি ব্যবস্থাপনার যে নিয়মনীতি, তাও ভেঙে ফেলা হয়। যার ফলে পানির উৎসগুলো নষ্ট হতে থাকে। একই সঙ্গে বনভূমি বিনষ্ট হয়। বরেন্দ্র অঞ্চল ধীরে ধীরে বিরানভূমিতে পরিণত হয়।
পাকিস্তান আমলেও জলাধার সুরক্ষা বা উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে মনে করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানে ষাটের দশকে প্রথম ১ হাজার ৫৫৫টি যন্ত্রচালিত টিউবওয়েল দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এখান থেকেই মূলত যন্ত্র দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের যাত্রা শুরু। এখন হাজার হাজার গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশের চারটি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে প্রাণঘাতী কীটনাশকের প্রভাব শীর্ষক গবেষণার সমন্বয়ক, গবেষক ও বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে নিষিদ্ধঘোষিত কীটনাশকগুলোও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষক এবং কীটনাশক ডিলাররা অনেক সময় জানে না এটি। কারণ নিষিদ্ধ কীটনাশকগুলো বিভিন্ন নামে বাজারে আসছে।
রাজশাহী গ্রিন কোয়ালিশনের সভাপতি নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহবুব সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. বিধান চন্দ্র দাস।
বক্তব্য দেন বারসিকের বরেন্দ্র অঞ্চলের গবেষণা সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে রাজশাহী, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন কৃষ্টিপ্রতিবেশ অঞ্চলের প্রায় ৫০ জন কিষান-কিষানি, তরুণ-যুব ও নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।