কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা জারী এবং পাবলিকেরা হাত ধোয়ার সাবান পাবে কই?
মিসেস ফাতেমা জিন্নাত
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস বর্তমানে সারা বিশ্বের এক মহা আতংকের নাম। চীনের হুবি প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে উৎপত্তি এই মরণ ব্যাধীর ভাইরাসটি WORLDMETER এর তথ্যমতে ১২/০৬/২০২০ তারিখ অবধি সারা বিশ্বের ২১৩ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রতিদিনই এর আগ্রাসনে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যু বরণ করেছে । এখন পর্যন্ত (১২/০৬/২০২০ তারিখ) এ ভাইরাসে ৭৫ লক্ষের অধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪.২০ লক্ষের অধিক লোক মারা গিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এ ঘাতক ভাইরাসকে মহামারী হিসাবে ঘোষনা করেছে। এ মরণ ঘাতক ভাইরাস হতে নিজকে এবং নিজস্ব পরিবেশকে রক্ষায় বেশ কিছু সর্তকতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রামন হতে রক্ষায় প্রথম প্রতিরোধমূলক সর্তকতাটি হল :
সাবান বা অ্যালকোহল ব্যবহার করে কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া (Hand wash Frequently with Soap or Alcohol)।
মানবদেহে রোগ জীবানু প্রবেশের পথ ৪(চার) টি।
- ১। মুখ গহবরের মাধ্যমে – বেশীর ভাগ রোগ জীবানু, হেভী মেটাল খাদ্য গ্রহণ ও শ্বাস প্রশ্বাসের সময় এ পথে মানবদেহে প্রবেশ করে।
- ২। নাসারন্ধ্র এর মাধ্যমে :- শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মানব দেহে প্রবেশ করে।
- ৩। লোপ কুপ দিয়ে : আপক্ষাকৃত কম।
- ৪। ইনজেক্শন এর মাধ্যমে : – ইনজেকশন সিরিঞ্জ/ সুই এর মাধ্যমে।
রোগ জীবানু/ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশের পথ সমূহের মধ্যে প্রথম ২টি পথই অর্থাৎ মুখগহবর ও নাসিকাই প্রধান।
আর এ জন্য খাদ্য দ্রব্য গ্রহনে যেমন সর্তকর্তা থাকতে হবে, তেমনি খাদ্য দ্রব্যের সাথে ও নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সময় যাতে ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য কিছুক্ষন পর পর হাত ধোয়া ও মাস্কের মাধ্যমে মুখ গহবর ও নাসারন্ধ্র সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
তবে আমরা সর্বকাজে ও খাওয়া দাওয়ায় সময় এবং অভ্যাসগত ভাবে কিছুক্ষণ পরপরই মুখে, নাকে হাত ব্যবহার করে থাকি। তাই হাত যাতে জীবানু (ভাইরাস) মুক্ত থাকে তার জন্য Frequently সাবান বা অ্যালকোহল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাল করে পানি দ্বারা হাত ধোয়ার সর্তকতাটিই প্রথম।
বলে রাখা ভাল যে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোঁয়া দিবস। বেশ কয়েক বছর পূর্বে প্রতি বছর ঘটা করে এ দিবসটি পালন করা হলেও এখন আর তা পালন করা হচ্ছে না।
এ দিবসটি এখন কখন আসে কখন যায় – তা আর তেমন ভাবে উপলব্ধি করা যায় না। কারন, জাতী হিসাবে হাত ধোয়া বিশেষ করে টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরিসংখ্যানে আমাদের অবস্থান খুবই দূর্বল (বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে বাংলাদেশে শহরে ৫১. ৪০% এবং গ্রামে ২৫.৭% এবং শহর ও গ্রামে গড়ে ৩৪.২০% লোক টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান বা অ্যালহোল জাতীয় জীবানু নাশক দিয়ে হাত ধৌত করে) ।
গ্রামে দ্রারিদ্রতা/অজ্ঞতার জন্য এবং শহরে সুযোগ সুবিধার অভাবের জন্যই আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষই টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধৌত করছেনা বা করতে পারছে না।
শহরের মানুষ কেন টয়লেটের পর সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে পারছেনা বা ধৌত করার সুযোগ পাচ্ছে না নীচে এর কয়েকটি অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর কিন্তু বাস্তব সত্য সংশ্লিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হ’ল;-
যে কোন পর্যায়ের সরকারী দপ্তর – সে উঁচু স্তর হতে নিন্মতর স্তর হউক না কেন দপ্তর প্রধান ও উদ্ধর্তন কিছু কর্মকর্তাগনের টয়লেট বা ওয়াশ রুম ব্যতীত নিন্ম পর্যায়ের কর্মকর্ত/কর্মচারী ও দর্শণার্থীদের টয়লেটে/ ওয়াশ রুমে হাত ধোয়ার জন্য কোন সাবান বা অ্যালকোহল সাধারনত পাওয়া যায় না, যেমন-
- (০১) খোদ বাংলাদেশ সচিবালয় এবং অধিনস্ত দপ্তর, পরিদপ্তর, আধা সরকারী বা স্বায়ত্ব শাসিত সংস্থা, সেক্টর কর্পোরেশনসমূহ,
- (০২) সরকারী হাসপাতালসমূহ,
- (০৩) বিচার বিভাগীয় দপ্তরসমূহ,
- (০৪) জেলায় জেলায় অবস্থিত জেলা প্রশাসক, কোর্ট বিল্ডিংসমূহ,
- (০৫) বিমান বন্দর, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনালসমূহ,
- (০৬) বাংলাদেশ রেলওয়ের ষ্টেশনসমূহ,
- (০৭) নগর ভবন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌর সভার কার্যালয়সমূহ,
- (০৮) সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভায় অধিনস্ত পাবলিক টয়লেটসমূহ (ইদানিং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধিন কয়েকটি আধুনিক স্মাট টয়লেটে সাবান/অ্যালকোহলের ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে),
- (০৯) সরকারী –বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে (বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ সর্বস্থানেই একই অবস্থা)
- (১০) বনিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ভবন সমূহ ইত্যাদি সকল স্থানেই একই অবস্থ।
এ ছাড়াও শুধু হাত ধোয়ার সাবান বা অ্যালকোহল থাকে না – তাই শুধু নয় । এমন অনেক পাবলিক টয়লেট আছে যেথায় টয়লোটের দরজা নাই, দরজা থাকলে ভিতরে পানির ব্যবস্থা নাই, পানির ব্যবস্থা থাকলে পানি ব্যবহারের কোন পাত্র নাই, পানির কল নাই, এসব থাকলেও আবার এত নোংরা যে তা ব্যবহার একেবারেই অনপুযোগী।
অথচ এ সকল প্রতিষ্ঠানে এসব খাতে সরকারী বরাদ্দ থাকে, টাকাও খরচ হচ্ছে, শুধুমাত্র দপ্তর প্রধানের একটু তত্ত্ববধানের অভাবেই নিন্ম পর্যায়ের কর্মকর্তাগন/কর্মচারীগণ এবং সাধারন জনগনের জন্য এ অপরিহার্য স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে না।
এতে যে কেবল ঐ স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারী বা সাধারন জনগন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা কিন্তু নয় এতে দপ্তরের বড় বড় কর্তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, কারন নিন্ম পর্যায়ের করমচারীরাই বড় কর্তাদের চা, নাস্তাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করে থাকে, তাই বড় কর্তা ব্যক্তিগণও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর এই করোণা কালে তো সবাই হচ্ছে।
আরও ভয়াবহ অবস্থা হল, সে সকল স্কুল, কলেজ মাদ্রসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীগণ যারা নামাজ পড়ছেন বা নামাজ পড়ার নিয়ম রয়েছে সে সকল প্রতিষ্ঠানে। ছাত্র ছাত্রীদেরকে জুতা ও মোজা পড়া অবস্থায় স্কুল, কলেজে যেতে হয়, ইহাই স্বাভাবিক।
নামাজ আদায় করার জন্য অজু করতে হয়, টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এতো ছাত্রের অজু বা টয়লেট ব্যবহারের জন্য ওয়াশরুমে বা টয়লেটে কোন স্পন্জ বা সেন্ডেল জাতীয় কিছু থাকেনা।
তাই ছাত্র ছাত্রীদের সাধারনত খালী পায়েই টয়লেট ব্যবহার ও অজু করার জন্য ওয়াশ রুমে যেতে হয়। বিষয়টি স্বাস্থ্যগত ভাবে কত মারাত্ক ক্ষতিকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই উপরোক্ত বিষয়টি দিয়েই মূল্যায়ন করলেই সহজে বুঝা যায় যে, মরণ ব্যাধী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু ?