করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ব আজ থমকে দাড়িয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য এরই মধ্যে চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে টিকা প্রয়োগও শুরু করে দিয়েছে। আর এসব কিছুর মধ্যে করোনার টিকা তৈরিতে আলোচনায় এসেছে নাল কাঁকড়া (Horseshoe crab) নামের একটি প্রাণী।
এই প্রাণীটিকে দেখতে অনেকটা ঘোরার খুরের মতো, জাতে নাকি কাঁকড়া। যদিও জীববিজ্ঞানীদের মতে, এটিকে দেখতে কাঁকড়ার মতো দেখতে হলেও এটি আসলে একটি সামুদ্রিক কাঁকড়াবিছে। এই নাল কাঁকড়ার রক্তের রং হালকা নীল।
নাল কাঁকড়া কপার-যুক্ত এক রকম হিমোসায়ানিনের সাহায্যে অক্সিজেন পরিবহন করে। এই কপার-যুক্ত হিমোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে নাল কাঁকড়ার রক্তের রং নীল দেখায়। শ্বেত রক্তকণিকার পরিবর্তে এদের রক্তে রয়েছে ‘অ্যামিবোসাইট’ নামের বিশেষ কোষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই রক্তে উপস্থিত যে কোনও জীবাণুর মোকাবেলা করতে সক্ষম।
এই নীল রক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। পরীক্ষাগারে বিভিন্ন ওষুধ, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা পরখ করে দেখার ক্ষেত্রে নাল কাঁকড়ার নীল রক্ত অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান।
জীববিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৪৪ কোটি বছর ধরে এই নাল কাঁকড়া পৃথিবীতে টিকে রয়েছে। সে জন্য অনেক বিজ্ঞানী এটিকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলে থাকেন। নাল কাঁকড়া শুধুমাত্র প্রজননকালে (জন্মের অন্তত ১০ বছর পর) সমুদ্রের পাড়ে চলে আসে। এই সময়ই এদের থেকে নীল রক্ত সংগ্রহ করে আবার এগুলিকে ছেড়ে দেন বিজ্ঞানীরা।
নাল কাঁকড়ার নীল রক্তের বিশেষ জীবাণুনাশক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই রীক্ষাগারে বিভিন্ন ওষুধ, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা পরখ করে দেখা হয়। বর্তমানে করোনার প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত জরুরি এবং একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে নাল কাঁকড়ার নীল রক্ত!