32 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৫:১১ | ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
উপকূলে জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
পরিবেশ ও জলবায়ু

উপকূলে জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

উপকূলে জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। প্রতিবছর লবণাক্ততার কারণে ফসলের উৎপাদন কমছে, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে জনপদ তলিয়ে যাচ্ছে। বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ঝুঁকিও বাড়ছে, বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

হাতিয়া উপজেলার বিচ্ছিন্ন এক জনপদ নিঝুম দ্বীপ। জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার, যার অর্ধেক নারী ও শিশু। মাছ ধরা তাদের প্রধান জীবিকা। প্রতিবছর নদীভাঙনে দ্বীপের আয়তন কমছে। বাস্তুচ্যুতি, রোগব্যাধি ও অপুষ্টি তাদের নিত্যসঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৌনঃপুনিক বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস তাদের এই ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একমাত্র মিডওয়াইফ মোসাম্মৎ দীপা খানম বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন ৩ থেকে ১৫ জন নারীর ডেলিভারি করতে হয়। যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। পরিবারের বেশির ভাগ পুরুষ মাছ ধরতে যান গভীর সমুদ্রে। শিক্ষার সুযোগ নেই। বাল্যবিয়ে এখানে বেশি।

অপুষ্ট শরীরে অপুষ্ট শিশুর জন্ম হয় এখানে। আমি তাদের হাতিয়া উপজেলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিই। স্বাস্থ্যসেবা বলতে এখানে আমি ও একজন আয়া আছি। ডেলিভারি টেবিলটিও ভাঙা আর পেঙ্গুইন সাকারও নেই, যা নবজাতকের জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীর বিপন্নতা কেন বেশি– এ প্রশ্নের উত্তরে গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভারনাবিলিটি স্টাডিজের শিক্ষক মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের গাবুরা এলাকার পানির লবণাক্ততা ও সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা একই মাত্রার।

প্রভাব পড়েছে নারীর স্বাস্থ্যে, তাদের মাসিক চক্রে গোলমাল দেখা দিচ্ছে। নারীরা কোমরপানিতে নেমে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা চিংড়িপোনা সংগ্রহ করেন। মাসিক ব্যবস্থাপনার অভাবে নারীরা– কম বয়সী মেয়েরা নিয়মিতভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খান দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কথা না জেনে।



চর ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীরা সহজে স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পান না। সুপেয় পানির জন্য তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। নিজে লবণাক্ত পানি খেয়ে বা কম পানি খেয়ে পরিবারের অন্যদের পান করার জন্য পানি রাখেন। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চর্মরোগ, প্রি-একলাম্পশিয়া এমনকি গর্ভপাতের শিকার হন।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওআরএস বা প্যাকেটজাত মুখে খাওয়ার স্যালাইন দক্ষিণাঞ্চলে ততটা কার্যকর নয়।’

কোস্ট ফাউন্ডেশনের ক্লাইমেট চেঞ্জ বিভাগের প্রধান আবুল হাসান বলেন, ‘পরিবারের পুরুষ যখন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ঘর ছাড়েন, নারীরা রয়ে যান পেছনে পুরো পরিবার নিয়ে। পরিবারের ছোট বাচ্চা, কিশোরী মেয়ে, বয়স্কদের দায়িত্ব নিতে হয় তাদের।

সমুদ্রে ডুবোচর জাগছে। মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। পুরুষটিকে আরও গভীর সমুদ্রে যেতে হয়। নিরাপত্তার কথা ভেবে কিশোরী মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে যেতে হয়। কিশোর ছেলেটিকে দিতে হয় ইটভাটায় বা অন্য কোনো কাজে।

কখনও পুরো পরিবার মিলে ইটভাটায় কাজ করে জেলেদের দাদনের টাকা শোধ করতে হয়। কখনও কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা নোনাপানিতে দাঁড়িয়ে মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হয়। এই ঘটনাগুলো কক্সবাজারের জেলে পরিবারের নারীদের।’

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. কালাম মল্লিক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের আরও একটি অভিঘাত হচ্ছে ক্রমেই তাপপ্রবাহ বেড়ে চলা। এখানেও নারীদের বিপন্নতা বেশি তাদের পোশাকের কারণে। কারণ অনেক রকম পোশাকে নারী ঢেকে রাখে শরীর।

ফলে অত্যধিক তাপপ্রবাহ নারীর হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। আবার এই তাপপ্রবাহের মধ্যে রান্নাঘরে অনেকটা সময় কাটাতে হয়, যেখানে ধোঁয়া ও তাপ ছাড়াও পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকে না।

ফলে নারীরা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া পোশাকের কারণে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারীর মৃত্যুঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, পুষ্টিহীনতা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতায় ২০৩০ সালের পর থেকে বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ম্যালেরিয়া নো মোর (আর নয় ম্যালেরিয়া) নামের একটি অলাভজনক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্টিন এডলুন্ড বলেন, ‘চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোক, অর্থাৎ তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতা বাড়ছে।

নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কীভাবে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এগুলো তার সামান্য নমুনা মাত্র।’

টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার ১৩ নম্বরে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, বিশ্ব সম্প্রদায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটি থেকে দূরে সরে থাকা।

মাত্র ৮৫টি দেশ এ পর্যন্ত জাতীয় দুর্যোগ নিরসন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতেও উন্নত দেশগুলো তাদের বিনিয়োগ কমায়নি। ফলে কার্বন নিঃসরণ কমানো ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনও গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত