উন্নয়নের নামে কাটা হচ্ছে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের গাছ
‘সড়ক উন্নয়নে’ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের দু’পাশের প্রাচীন শতবর্ষী বিভিন্ন জাতের গাছ কাটছে যশোর জেলা পরিষদ। পালবাড়ী মোড় থেকে মান্দারতলা পর্যন্ত ৮৩৫টি গাছ কাটা শুরু হয়েছে।
যশোর জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ৬ লেনের যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক। সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা।
এই সড়কের যশোর অঞ্চলের শেষ সীমানা মান্দারতলা। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এই সড়কের দু’পাশে আছে আট শতাধিক প্রাচীন গাছ এবং পালবাড়ী মোড় থেকে মান্দারতলা পর্যন্ত ৮৩৫টি গাছ কাটা শুরু হয়েছে।
প্রাচীন এই গাছগুলোর মালিকানা নিয়ে গাছের গায়ে নাম্বার প্লেট লাগায় যশোর জেলা পরিষদ। ৮৩৫টির মধ্যে বেশিরভাগ মেহগনি গাছ। অন্যগুলো রেইনট্রি, সেগুন ও জাম গাছ।
সূত্র জানায়, যশোর জেলা পরিষদ ৮৩৫টি গাছের দরপত্র অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেছে ৬ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ১০১ টাকা। প্রতিটি গাছের গড় মূল্য ৭৫ হাজার ৩৬৫ টাকা ৩৯ পয়সা। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ সব গাছ কাটা সম্পন্ন হবে।
যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, ‘জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক উন্নয়ন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী খাড়া গাছ বিক্রয় প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে জেলা পরিষদ।
গাছের বিক্রয় মূল্য ২ কোটি ১০ লাখ দশ হাজার ১০১ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায় মেসার্স নাথ এন্টারপ্রাইজ।’
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, ‘জেলা পরিষদ গাছ কাটার আগে আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছিল। যেহেতু সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। তাই আমরা অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন দেওয়ার পর তারা টেন্ডার আহ্বান করে গাছ কাটা শুরু করেছে।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে জেলা পরিষদ অনুমোদন নিয়েছে। যেহেতু এগুলো জেলা পরিষদের সম্পদ তাই আমরা অনুমোদন দিয়েছি।’
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বীরমুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘১৯৬২ সালে পাকিস্তান আমলে যশোর ঝিনাইদহ মহাসড়কের নির্মাণ কাজ করা হয়। তখন রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ।’
হৈবতপুর ইউনিয়নের লাউখালী গ্রামের ৯০ বছরের বদরউদ্দিন জানান, তিনি ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছেন। জন্মের পর থেকেই এই গাছগুলো দেখে আসছেন তিনি। সড়কের দু’পাশের গাছগুলোর গড় বয়স ৭০ বছরের বেশি।