ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ
দেশে ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ইটভাটা। আর এসব ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, মানুষ ভুগছে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। যদিও বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় দেখা যায় এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে ওইসব ইটভাটার মালিকদের এমনকি সিলগালাও করে দেওয়া হচ্ছে কিছু কিছু ইটভাটা।
তারপরও দিন শেষে এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও খুব বেশি সুফল মিলছে না, বরং অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সিলগালা করা ইটভাটা গুলো কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও পুরোদমে চলছে। ছড়িয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোয়া।
এক প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশের ইট ভাটার ৬০ শতাংশই অবৈধ এবং এসব ইট ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ভাটায় ইট তৈরিতে পোড়ানো হচ্ছে দেশীয় গাছ-কাঠ। অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন, একইসঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি।
কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এসব ইটভাটার কর্তৃপক্ষরা ইটভাটায় ফসলি জমি ব্যবহার, গাছ পোড়ানো অবৈধ জেনেও দেদারছে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর চলছে এসব অবৈধ ভাটাগুলো।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না। কৃষিজমিতেও ইটভাটা অবৈধ। অথচ দেশের প্রায় শতভাগ ইটভাটাগুলোই এসবের কোনটাই মানছেনা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশে মোট ৭ হাজার ৮৬টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। এসব ইটভাটার বছরে ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটি লাগে। মূলত কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে ইট তৈরি হচ্ছে।
পাশাপাশি অধিকাংশ ইটভাটার কারণে কৃষিজমির ফসলের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আশপাশের বাসিন্দাদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এসব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে প্রচুর পরিমাণে ছাই তৈরি হয়। অন্যদিকে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে।
এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে ইটখোলা থেকে ৫৩ হাজার ৩৩৩ টনের বেশি পার্টিকুলেট ম্যাটার-১০ বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ হাজার ৫৫৭ টন পার্টিকুলেট ম্যাটার-২.৫ এবং ৫৯ হাজার ২২১ টনেরও বেশি সালফার অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়েছে।
যদি এই দূষিত উপাদানের নির্গমন বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না। তাই সরকারকে এখনি এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইটভাটায় কৃষিজমির মাটির ব্যবহার, কৃষি জমি বিনষ্টকরণ বন্ধ করতে হবে। ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে গাছপালা কেটে কাঠ পোড়ানো বন্ধ করাসহ অবৈধ ও পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারকে ইটভাটার ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরে ব্যাপক ভাবে প্রচারণা চালাতে হবে।